বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, শেখ হাসিনার পতন দেখেছি, কিন্তু আমাদের মূল লক্ষ্য জনগণের গণতন্ত্র এখনো ফিরে পাইনি। আমরা ২০০৮ সাল থেকে গণতন্ত্রের লড়াইয়ে নেমেছি। একটি সুস্থ, অবাধ নির্বাচন, নিজের ভোট নিজে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। এই আন্দোলন চলমান।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর শিববাড়ি মোড় জিয়া হল চত্বরে র্যালিপূর্ব খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি খুলনা বিভাগ এই সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এসএম শফিকুল আলম মনা।
গয়েশ্বর রায় বলেন, আমাদের জন আকাঙ্ক্ষার একটি ভোট। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেব, দিনের ভোট দিনে দেব। কোনো রাতের ভোট না।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে গয়েশ্বর রায় বলেন, জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আপনি সফল হন আমরা এটাই চাই। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য যতটুকু সময় লাগে, ততটুকু সময় আমরা দেব। আমাদের নির্বাচন চাই। তারিখ ঠিক করে জানিয়ে দেন এত মাসের, এত তারিখ নির্বাচন। আপনারা প্রস্তুতি নেন। আমরা সকল রাজনৈতিক দল মাঠে নামি। নির্বাচনী প্রস্তুতি নিই। তারপর জনগণ কাকে ভোট দেবে না দেবে সেটা সিদ্ধান্ত হবে।
অন্তবর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে বিরোধী দল ভাববেন না। বিএনপি একটি বৃহত্তর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা আপনাদের সকল কাজের সমর্থনকারী। আপনারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল, কোনো রাজনৈতিক দল না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যারা আছেন, তাদের প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস আছে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন দেবেন। জাস্ট আপনাদের কাজ জাতিকে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনারা (অন্তবর্তীকালীন সরকার) আমাদের সব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করেননি, শুধু কয়েকটি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমার নামে ৬০টি মামলা। হাসিনা নেই, আমি কেন আদালতে হাজিরা দেব। কেন আমাদের নেতা-কর্মীদের হাজিরা দিতে হয়? তারা কি চুরি, খুনের মামলার আসামি? তারা রাজনৈতিক মামলার আসামি। সেই মামলা মোকাবিলা করে আমাদের আন্দোলনের ফসল আপনারা। আপনারা সঠিক কাজের উদ্যোগ নিন, আমরা আমাদের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে সহযোগিতা করব।
গয়েশ্বর রায় বলেন, কাদের কি শক্তি আছে, আমাদের জানার দরকার নেই। আমরা মনে করি জনশক্তির উপরে কোনো শক্তি নেই। যদি থাকত তাহলে হাসিনা আমৃত্যু ক্ষমতায় থাকত। শেখের বংশ আজীবন ক্ষমতায় থাকত। মাঝেমধ্যে একটি গানের কথা মনে হয়- ‘আমার বলার কিছু ছিল না, চেয়ে চেয়ে দেখলাম হাসিনা পালিয়ে গেল’। হাসিনা মাথা নত করে না, হাসিনা পালায় না। শেখ হাসিনা পালিয়ে প্রমাণ করেছে সে পালাতে অভ্যস্ত। ওয়ান- ইলেভেনের সময় সে পালিয়েছিল কি? খালেদা জিয়া পালায় না, খালেদা জিয়ার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস নেই। শেখ মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আছে, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আছে।
তিনি আরও বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করবে। দৃশ্যমান ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবিলা করেছি। এখন অদৃশ্য ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে আবার মোকাবিলা করতে চাই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাইয়েরা পালালো কী করে? সবাই দেশে নেই কেন? তাদেরকে পালাতে সুযোগ দিল কে? কেন তারা পালালো? আমরা তো চাই না কেউ মাতৃভূমি পরিত্যাগ করুক। অপরাধ করলে আইন তার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে। তাদের বিচার হবে, সেই বিচার প্রহসনের বিচার নয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে প্রহসনের বিচার হয়েছে। আমরা কারও কোনো বিচার প্রহসন বা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই না। সুষ্ঠু এবং ন্যায়বিচার চাই। জাস্টিস, ছাত্রদের স্লোগান। আমরা আইন হাতে তুলে নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকে তাহলে এক রাতে এক লাখ লোক মারা যাবে। আওয়ামী লীগ চলে যাওয়ার পর কয়জন মারা গেছে? আমাদের কর্মীরা আওয়ামী লীগের কোনো বাড়ি ভেঙেছে? তালিকা প্রকাশ করেন। আর এই ১৬ বছর কত বাড়ি ভেঙেছেন, কতজনের ঘুম কামাই গিয়েছে, মাসের পর মাস বছরের পর বছর যারা ঘর-বাড়ি ছাড়া ছিল। আমাদের আন্দোলনের পরিসমাপ্তি বৈষম্যবিরোধী।
কোটা আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ছেলেরা স্লোগান দিতে বাধ্য হলো, চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার। তুই রাজাকার, আমি রাজাকার সবাই রাজাকার।’ ওবায়দুল কাদের বললেন স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কথা যারা বলেছে আমার ছাত্রলীগই যথেষ্ট তাদের দমনে। ওবায়দুল কাদের, শেখ হাসিনা কোথায় আছেন জানি না। এই ছাত্রলীগই আপনাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করতে যথেষ্ট সেই প্রমাণ দিয়েছে।
খুলনা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, বিএনপির বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির জাতীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবীব, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান ও মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব শফিকুল আলম তুহিন প্রমুখ।
নগরীর শিববাড়ী মোড়স্থ জিয়া হলের সম্মুখে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ র্যালি বের হয়। র্যালিটি শিববাড়ী মোড় থেকে লোয়ার যশোর রোড হয়ে পাওয়ার হাউজ মোড়, ফেরীঘাট মোড়, ডাকবাংলো মোড়, পিকচার প্যালেস মোড় হয়ে খুলনা সার্কিট হাউস ময়দান, খুলনা জিলা স্কুলের সামনে ঘুরে কেডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
খুলনা গেজেট/এএজে