যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে বিষয়টি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি নিরসনের বিষয়ে সমাধান না এলে ১ আগস্ট থেকে দেশটিতে পণ্য রপ্তানিতে বর্ধিত হারে শুল্ক দিতে হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।
বৈশ্বিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের ৯০ দিনের শুল্কবিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে অর্থাৎ স্থানীয় সময় গত সোমবার এই ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশ্য ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টিও মোটামুটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে গত এপ্রিলে পাল্টা শুল্কারোপের ঘোষণার পর তিন মাসেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারের দর-কষাকষিতে অগ্রগতি না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অনেক কারখানা অস্তিত্বসংকটে পড়বে। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে দর-কষাকষি শেষ করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
তবে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত শুল্ক চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ওয়ান টু ওয়ান নিগোসিয়েশনের মাধ্যমে এটা ঠিক হবে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ৮ জুলাই (আজ বুধবার) যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের বৈঠক হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টা আছেন। ইউএসটিআরের সঙ্গে আলাপ করবেন তিনি। ওই বৈঠকের পর আপনারা বুঝতে পারবেন।’
বৈঠকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের বিষয়টি শুধু শুল্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বাণিজ্যের বিষয়, যার ফলাফল হচ্ছে শুল্ক। তাই এই সমস্যার সমাধানের সঙ্গে বাণিজ্যনীতিসহ অনেক বিষয় জড়িত। বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্য করে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা বা ডব্লিউটিওর বিধিবিধান মেনে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তি শুল্কের সমাধান করতে হলে সেই নীতিমালাগুলোতেও পরিবর্তন আনতে হবে। আর সেটি করতে হবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব দেশের জন্য। তাই আমরা গভীর চিন্তাভাবনা করে এ বিষয়ে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছি। আমাদের দিক থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।’
যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর গত ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের ৫৭টি দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। তখন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল ৩৭ শতাংশ। গত ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক কার্যকরের সময় তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়।
খুলনা গেজেট/এইচ