‘সব সখিরে পার করিতে নেবো আনা আনা, তোমার বেলায় নেবো সখি তোমার কানের সোনা’-বাংলা চলচ্চিত্রের এই কালজয়ী গানের চিত্র যখন মনে পড়ে, তখন অবলীলায় চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক সুদর্শন যুবকের কথা। তিনি নায়ক ফারুক। বাংলা চলচ্চিত্রের সাদাকালো যুগের অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় নায়ক তিনি। চলচ্চিত্রের মানুষজনের কাছে ফারুক ‘মিয়া ভাই’ নামেও পরিচিত। চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। অভিনয় থেকে দূরে থাকলেও চলচ্চিত্রের জন্য এখনও কাজ করে যাচ্ছেন বরেণ্য এই অভিনেতা। আজ তার জন্মদিন। শুভ জন্মদিন মিয়া ভাই।
এই বিশেষ দিনে ফারুক দেশে নেই। তিনি অবস্থান করছেন লন্ডনে। তাই জন্মদিন উপলক্ষে কোনো বিশেষ আয়োজন কিংবা অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যাবে না। যদিও ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনার পর থেকেই নিজের জন্মদিন সেভাবে পালন করেন না ফারুক। কারণ বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন ছিলেন তিনি।
নায়ক ফারুকের পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু। তিনি শুধু একজন অভিনেতাই নন, প্রযোজক ও ব্যবসায়ী হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে। ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন ফারুক। তার বাবা আজগার হোসেন পাঠান। এ নায়কের শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে পুরান ঢাকায়। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
স্কুল জীবন থেকেই ফারুক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেন এবং এ সময়ে তার নামে প্রায় ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন তিনি।
ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’র মাধ্যমে। এতে তার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন কবরী। ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ নামের দুটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন ফারুক।
নায়ক হিসেবে ফারুক আলোচনায় আসেন ১৯৭৫ সালে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ ছবি দুটির মাধ্যমে। এই দুটি ছবিই ব্যবসাসফল ও দর্শকনন্দিত হয়েছিলো। এমনকি সেই বছর ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন ফারুক।
ফারুক অভিনীত অন্যান্য ছবিগুলোর মধ্যে ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘মাটির মায়া’, ‘নয়নমনি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘নাগরদোলা’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘কথা দিলাম’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব’, ‘ছোট মা’, ‘এতিম’, ‘ঘরজামাই’, ‘সখী তুমি কার’ ও ‘মিয়া ভাই’ উল্লেখযোগ্য।
খুলনা গেজেট/এআইএন