প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করা আমার সংগ্রাম। শুধু আওয়ামী লীগের সময় আপনি নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে পাবেন।
সম্প্রতি লন্ডনে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে নিজের আন্তরিকতার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার বিবিসি বাংলা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারটি প্রচার করে।
লরা কুয়েন্সবার্গকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে রানিকে নিয়ে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন এবং গুমের অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা।
নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে দীর্ঘ সামরিক শাসনের ইতিহাস তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশ দীর্ঘ সময় সামরিক শাসকের অধীনে ছিল। সেটা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হোক কিংবা প্রকাশ্যে বা গোপনেই হোক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে যখন আমার বাবাকে হত্যা করা হয়, তিনি তখন দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আপনি জানেন আমার পুরো পরিবার, আমার মা, ভাই, তাদের স্ত্রী এবং অন্য সদস্যদের হত্যা করা হয়। এরপর থেকে পরবর্তী ২১ বছর পর্যন্ত কোনো না কোনো সময় আমাদের দেশে সামরিক শাসন ছিল।
সেই অবস্থা থেকে গণতন্ত্র ফেরাতে নিজের ভূমিকা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আনুমানিক ২০ বার সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছিল, প্রতিবারই রক্তক্ষয় হয়েছে। কোনো গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। আমার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে আমার সংগ্রাম করতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সেনা শাসক দেশ শাসন করেছে। তারা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। তারা কখনও মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চায়নি। তারা সেনাবাহিনী ও প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য। শুধু আওয়ামী লীগের সময় আপনি নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে পাবেন।
গুমের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, অনেক মানুষ অভিযোগ তুলতে পারে। কিন্তু তার কতটুকু সত্য, তা আপনাকে বিচার করতে হবে। তার আগে কারও কোনো মন্তব্য করা উচিৎ না।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি শুধু রানি ছিলেন না, একজন মমতাময়ী, মাতৃসুলভ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যখন আমার সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছে, আমি সেটা অনুভব করেছি। কমনওয়েলথের সদস্য দেশ হিসেবে তিনি আমাদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি সত্তর বছর ধরে সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন।
রানিকে ঘিরে ব্যক্তিগত স্মৃতি নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৬১ সালে দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সফর করেন, আমার তাকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। আমরা আমার বাবার অফিসে ছিলাম, কারণ আমরা জানতাম যে তিনি ওই রাস্তা দিয়ে যাবেন। আমাদের পুরো পরিবার জানালার পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলাম। হাতে বাইনোকুলার নিয়ে যেন আমরা তাকে ভালোভাবে দেখতে পারি।