খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ মাঘ, ১৪৩১ | ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  দৈনিক ভোরের কাগজের প্রধান কার্যালয় বন্ধ ঘোষণা
  সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ক্ষমতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের

শিশু গৃহকর্মীর ওপর আড়াই বছর ধরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন

নরসিংদী  প্রতিনিধি

নরসিংদীর শিবপুরে আড়াই বছর ধরে একটি পোশাক কারখানার কোয়ার্টারের বাসায় আটকে রেখে ৮ বছরের এক শিশু গৃহকর্মীর ওপর চালানো হচ্ছিল বর্বর নির্যাতন। নির্যাতন সইতে না পেরে ২১ আগস্ট পালিয়ে বাড়ি ফেরার পর প্রকাশ হয় এই নির্যাতনের ঘটনা। এরপর থেকে পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত ওই দম্পত্তি।

শিবপুরের কারার চর এলাকার স্বনামধন্য একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা চাঁদপুর জেলার মো: মঈন উদ্দিন মজুমদার জুয়েল ও তার স্ত্রী রহিমা বেগম ওরফে শাপলার বিরদ্ধে এই নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। টানা নির্যাতনের শিকার হয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে দরিদ্র পরিবারের এই শিশুটি। এই ঘটনায় শিশুটির পরিবার গত ২৪ আগস্ট থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধূরী।

পুলিশ, এলাকাবাসী ও নির্যাতনের শিকার শিশুটির পরিবার জানায়, শিবপুর উপজেলার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দরিদ্র আব্দুর রশিদের ৮ বছর বয়সী ছেলেকে আড়াই বছর আগে অভাবের তাড়নায় কারার চর এলাকার একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা (ডিরেক্টর প্রোডাকশন) গৃহকর্তা মো: মঈন উদ্দিন মজুমদার জুয়েল ও তার স্ত্রী রহিমা বেগম ওরফে শাপলার কোয়ার্টারের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে দেয়া হয়। লেখাপড়া করানোসহ বাসায় অন্য শিশুদের সাথে সময় কাটানো এবং বাসার দরজা খুলে দেয়া কাজের কথা বলেই নেয়া হয়েছিল তাকে। সেখানে নেয়ার পর থেকে নিয়মিত খেতে না দেয়াসহ কারণে অকারণে লাঠি, লোহা, বেলুন, ছেনিসহ নানা ধরনের জিনিস দিয়ে করা হচ্ছিল শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

মাঝেমধ্যে শিশুটির বাবা-মা ছেলেকে দেখতে গেলে ঢুকতে দেয়া হতো না বাসায়। জানালা দিয়ে দেখানো হলেও পড়নে থাকতো বড় পোশাক যাতে নির্যাতনের ক্ষত দেখা না যায়। পরে পিতা মাতার হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে বিদায় করে দিতেন পোশাক কারখানার প্রোডাকশন ডিরেক্টর গৃহকর্তা মো: মঈন উদ্দিন মজুমদার জুয়েল ও তার স্ত্রী রহিমা বেগম ওরফে শাপলা। নির্যাতন সইতে না পেরে গত ২১ আগস্ট বাসার পেছনের দেয়াল টপকিয়ে পালিয়ে বাড়ি ফেরার পর বাবা-মাসহ এলাকাবাসী জানতে পারেন এই নির্যাতনের ঘটনা।

শিশুটির শরীর জুড়ে ক্ষত চিহ্নে ফুটে উঠেছে টানা দুই বছর ৫ মাস ধরে চলা নির্যাতনের চিত্র। নির্যাতনের কারণে অস্বাভাবিক আচরণ করছে শিশুটি। ফ্রিজের ঠান্ডা পানীয় ছাড়া, খাচ্ছে না কোন প্রকার খাবার। রাতে ঘুম না হওয়াসহ দেখা দিয়েছে নানা রকম মানসিক সমস্যা। শিশু গৃহকর্মীর নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। দাবি করেছেন এই ঘটনার বিচার।

নির্যাতিত শিশুর বাবা বলেন, তার ছেলের চোখ, মুখ, ঘাড়, মাথা, বুক, পাসহ প্রায় সব অঙ্গে রয়েছে নির্যাতনের দাগ। ঠান্ডা পানীয় ছাড়া কিছুই খাচ্ছে না সে। করছে অস্বাভাবিক আচরণ। তার স্মৃতি শক্তির সমস্যা দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর সহায়তায় তার প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও টাকার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি।
নির্যাতিত শিশুর মা বলেন, আমার ছেলের আচরণে মানুষ তাকে পাগল বলে নানান বিচার নিয়ে আসে। কোন খাবার খাচ্ছে না, এমন কী ঔষধও খাচ্ছে না।

অভিযুক্ত পোশাক কারখানার কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বক্তব্য জানতে গেলে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়া হয়নি ওই কোয়ার্টারে। তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন আব্দুর রহমান নামে কারখানার অপর এক কর্মকর্তা।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধূরী বলেন, এই ঘটনায় নির্যাতনের শিকার শিশুটির পিতা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অভিযুক্তরা পলাতক রয়েছে।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!