শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে মন্ত্রিসভা থেকে এখনই বিদায় করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। আঙুর, খেজুরের পরিবর্তে বরই দিয়ে ইফতার করার পরামর্শ দেওয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সোমবার (৪ মার্চ) রাজশাহীর গণকপাড়ায় জয় বাংলা চত্বরে জাতীয় যুবজোটের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রীর নাম উচ্চারণ না করে এ আহ্বান জানান তিনি।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘আমি একটু আগে মোবাইলে দেখলাম, এক মন্ত্রী বলেছেন, রোজার সময় খেজুর আর আঙুর দিয়ে ইফতার কইরেন না, বরই দিয়ে করেন। আল্লাহ, কী বলব বলেন! নিত্যপণ্যের মূল্যে মানুষ জর্জরিত। আপনি (মন্ত্রী) মানুষের সঙ্গে ঠাট্টা-মশকরা করেন। প্রধানমন্ত্রী, এই ধরনের মন্ত্রীকে এখনই বের করে দেন।’
ইনু বলেন, ‘দেশের যুব সমাজকে দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দুর্দশাগ্রস্ত জনগণের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের চিরশত্রু মৌলবাদী-জঙ্গিবাদী-তালেবানি শক্তি এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতা দখলের রাজনীতিও মোকাবিলা করতে হবে।
ইনু আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যুবকই ছিল। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও যুবকদেরই ঝান্ডা ধরতে হবে। বাঙালিদের যারা ধ্বংস করতে চায়, ধর্মের নামে যারা পাকিস্তানি ও তালেবানি সংস্কৃতি চাপিয়ে দিতে চায় তাদের প্রতিরোধ করে বাঙালীয় সংস্কৃতি প্রসারে যুবসমাজকে প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে অবতীর্ণ হতে হবে।
তিনি বলেন, ‘মাত্র দুমাস হলো নির্বাচন শেষ হলো। একটা উত্তাপহীন রাজনীতির কথা ছিল। কিন্তু একটা গুমোট ভাব, কোনো উত্তেজনা নেই। বিরোধিতার মতো রাজনৈতিক যুদ্ধের ভেতরে নির্বাচন কখনো ভালো হয় না, তাই হয়েছে। কমতি আছে, ঘাটতি আছে। কিন্তু দিনের শেষে বাংলাদেশের এত বিরোধিতার মুখেও নির্বাচনের রাজনীতির অনিশ্চয়তা দূর করে নির্বাচনটা হয়েছে। একটা স্বস্তি এসেছে। কিন্তু নিম্ন আয়ের মানুষ, দিন আনে দিন খায়, নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে কোনো স্বস্তি আসেনি। তারা পেটের জ্বালায় জর্জরিত। তেল, নুন, পেঁয়াজ, চিনি, আদা, রসুন, মরিচ, যেটাতেই হাত দেয়, হাতে পুড়ে যাচ্ছে। সকালে একদাম, বিকেলে ডাবল দাম।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হুঙ্কার ছাড়ছেন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। মন্ত্রীরা চিৎকার করছেন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, কিন্তু দাম কমছে না। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। তাহলে ব্যর্থ কে? শাসন ব্যর্থ! কেন তারা কথা শুনছে না? এটা কি সিস্টেমের দোষ, মুক্তবাজার অর্থনীতির দোষ, নাকি যারা দাম বাড়াচ্ছেন তারা সরকারের ছায়ায় বসবাস করেন যে, তাদের গলা টিপে ধরা সম্ভব হচ্ছে না? প্রধানমন্ত্রী বলার পরেও দাম কমে না, অস্বাভাবিক ব্যাপার! এত শক্তি, এত সাহস, এটা কীভাবে সম্ভব! এই জিনিসপত্রের দাম ওঠানামা করছে কয়েক বছর ধরে।
জাতীয় যুবজোটের সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি শরিফুল ইসলাম সুজনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন- জজাসদের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবুল হক বকু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, জাসদ রাজশাহী মহানগর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সিদ্দিকী শিবলী।
এ সময় প্রধান বক্তা ছিলেন, জাতীয় যুবজোট এর সভাপতি মো. শরিফুল কবির স্বপন। অনুষ্ঠানে জাসদের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউর রহমান শফি, রাজশাহী জেলা জাসদের সভাপতি প্রদীপ মৃধা, মহানগর জাসদের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল কবির বাবু, যুবজোটের কার্যকরী সভাপতি আমিনুল আজিম বনি সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/কেডি