পুলিশের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খানের সহযোগী শিপ্রা দেবনাথের ডিজিটাল আইনের মামলার আবেদন গ্রহণ করেনি কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ। মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিপ্রা দেবনাথ সাহেদুল ইসলাম সিফাতসহ একজন আইনজীবীকে নিয়ে থানায় যান। কিন্তু, ঘটনাস্থল রামু থানা এলাকায় হওয়াতে মামলাটি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুজ্জামান। মামলাটি রামু থানা অথবা আইসিটি ট্রাইব্যুনালে করারও পরামর্শ দেন ওসি।
ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনে পুলিশ কর্মকর্তাসহ দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলার জন্য থানায় গিয়েছিলেন শিপ্রা দেবনাথ।
শিপ্রা দেবনাথের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম টিপু বলেন, ‘টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ নিহতের ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার আসামি শিপ্রা দেবনাথ জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তার বেশকিছু ছবি-ভিডিও ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সামাজিকভাবে শিপ্রা বিপর্যস্ত হন। এ কারণে সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার আশায় সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ঢাকা পিবিআই পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানসহ ১০০ থেকে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করতে থানায় এসেছি। কিন্তু, কক্সবাজার সদর থানার পুলিশ আমাদের মামলাটি গ্রহণ করেনি। ঘটনাস্থল রামু থানা এলাকা হওয়ায় মামলাটি রামু থানা অথবা আইসিটি ট্রাইব্যুনালে করার পরামর্শ দিয়েছেন ওসি খায়রুজ্জামান।’
উপস্থিত শিপ্রার সঙ্গে সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম টিপু বলেন, ‘বাদী শিপ্রা দেবনাথ মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি এখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। যখন সময় হবে তখন কথা বলবেন।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মামলাটি রামু থানায় করবো, নাকি আইসিটি ট্রাব্যুনালে করবো তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এদিকে, গত সোমবার কক্সবাজারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘শিপ্রা ও সিফাতের কম্পিউটার ডিভাইস ও মেমোরিসহ ২৯টি সামগ্রী কক্সবাজারের রামু থানা পুলিশের হেফাজতে আছে। আমরা আদালতের মাধ্যম উক্ত সরঞ্জামাদি র্যাব হেফাজতে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কারণ, মামলার তদন্তের স্বার্থে উক্ত কম্পিউটার ডিভাইস গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেবে।’
এর আগে, ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে পোস্টকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করবেন বলে জানান শিপ্রা দেবনাথ। নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদের সহযোগী ও রাজধানীর স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিপ্রা নিজেই সোমবার বেসরকারি চ্যানেলে এক ভিডিও বার্তায় একথা বলেন।
পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে শিপ্রা ওই চ্যালেনের সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর রাতে এসে আমাদের কটেজ থেকে পুলিশ আমাদের দুটি মনিটর, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, ক্যামেরা, লেন্স, তিনটি হার্ডড্রাইভ এবং ফোন ডিভাইস নিয়ে যায়। জব্দ তালিকায় যার কোনোটির কোনও উল্লেখ নেই। আমি জানি না, এখন কীভাবে বা কার কাছে সেসব ফেরত চাইবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পারসোনাল প্রোফাইল ও ডিভাইস থেকে ছবি চুরি করে কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের দায়িত্বশীল অফিসাররাই ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন। আমার নামে খোলা হয়েছে ফেক ফেসবুক আইডি, ইনস্টাগ্রাম আইডি। আমার ব্যক্তি জীবনকে যারা অসহনীয় করে তুলেছেন, বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তৈরির মাধ্যমে, তাদের প্রত্যেকের জন্য আমি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো, কথা দিলাম।’
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। পরে রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে আটক করা হয়। দু’জনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত। ওই ঘটনায় ওসি প্রদীপসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা এবং পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী প্রথমে কক্সবাজার জেলা কারাগার ও পরে আদালতের ৭ দিনের রিমান্ড আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব হেফাজতে রয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ আর্মড পুলিশের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ প্রত্যেক আসামিকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
খুলনা গেজেট/এআইএন