জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শুক্রবার (৮ জুলাই) এক শোকবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শিনজো আবে আমার ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। তিনি বাংলাদেশেরও বন্ধু ছিলেন।
শিনজো আবের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, তার মৃত্যুতে জাপানের জনগণ এক অসাধারণ নেতাকে হারাল। একইসঙ্গে বাংলাদেশ হারাল তার একজন অকৃত্রিম বন্ধুকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করেন এবং আবের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য এবং জাপানের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আজ শুক্রবার শিনজো আবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেশটির একটি হাসপাতালে মারা যান। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১১টায় জাপানের পশ্চিমাঞ্চলের নারা শহরে বক্তব্য দেওয়ার সময় পেছন থেকে গুলি করা হয় ৬৭ বছর বয়সী শিনজো আবেকে। তিনি তখন একটি রেলস্টেশনের বাইরে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।
ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর শিনজো আবের গলা থেকে রক্তপাত হয়। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জাপানের গণমাধ্যম এনএইচকের খবর বলছে, ঘটনাস্থলে কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গেছে। এরপর ধোঁয়ায় চারদিক ছেয়ে যায়। ঘটনাস্থলে থাকা এনএইচকের এক সংবাদকর্মী বলেছেন, আবের বক্তব্য চলাকালে তিনি দুটি গুলির শব্দ শুনেছেন।
জাপানের স্থানীয় গণমাধ্যম এনএইচকের খবরে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় পুলিশ ৪০ বছর বয়সি এক ব্যক্তিকে আটক করেছে। তার বন্দুক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
জাপানে দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আবে। তিনি দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অসুস্থতার কারণে ২০২০ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। তবে ক্ষমতায় থাকা লিবারেল ডেমোক্রেটিক দলের (এলডিপি) ওপর তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।
তার অনুসারী প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা আগামী রোববার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে ভোটের সম্মুখীন হবেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, তিনি আবের ছায়া থেকে সরে এসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি শক্তিশালী করার চেষ্টা করছিলেন।
আবে তার সরকারের অর্থনৈতিক নীতির জন্য সুপরিচিত। তাঁর সরকারের এই অর্থনৈতিক নীতি ‘আবেনমিকস’ নামে পরিচিত। তিনি প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়ে সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করেছিলেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আবের সরকার প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়। ২০১৪ সালে আবের সরকার সংবিধানে ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনে।
২০০৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন আবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনিই ছিলেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী। ২০১২ সালে তিনি দ্বিতীয়বার জাপানের প্রধানমন্ত্রী হন। আবে সম্ভ্রান্ত রাজনৈতিক পরিবারের উত্তরসূরি। তার বাবা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
প্রসঙ্গত, জাপানে বন্দুক সহিংসতার ঘটনা খুব কম। দেশটিতে ছোট বন্দুকের (হ্যান্ডগান) ব্যবহার নিষিদ্ধ।
খুলনা গেজেট/ এস আই