১১ বছর আগে শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দি সরফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছামাদ আজাদ হত্যা মামলায় চার আসামিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক মো. মনির কামাল বুধবার এ দণ্ডাদেশ দেন। বিচারক মামলার ৯ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন নুরুজ্জামান খান, জাহাঙ্গীর মাতবর, জুলহাস মাতবর ও চান মিয়া। তাদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করেছেন বিচারক।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন আব্দুল হালিম মোল্লা, আজিজুল মাতবর, ফারুক খান, আজাহার মাতবর, মীজান মীর, আকতার গাজী, জলিল মাতবর, এমদাদ মাতবর ও লাল মিয়া। তাদের ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ টাকা অনাদায়ে তাদের আরও ৬ মাস কারাভোগ করতে হবে।
আজিবর বালী, আব্দুল খন্দকার, খোকন বেপারী, আজাহার মোল্লা ও ছোরাব মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের খালাস দিয়েছে আদালত। সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মাহবুবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, শরীয়তপুর সদরের চিকন্দি সরফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন আব্দুস ছামাদ আজাদ। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তৎকালীন চেয়ারম্যান হালিম মোল্লার কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনি এলাকায় পোস্টারিং করে আসছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হালিম মোল্লা হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
ওই অবস্থায় ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি শিক্ষক ছামাদ আজাদ সন্ধ্যায় শরীয়তপুরের পালং থানাধীন সন্তোষপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার লক্ষ্মীর মোড়ে বাবুল মুন্সির ক্রোকারিজের দোকান থেকে বের হন। রাস্তায় আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এসে রহিম পেদা, ওয়াজেদ শীল, সেলিম ফকির, ইসাহাক মুন্সী ও বিশ্বজিৎ শীল গুলিবিদ্ধ হন।
ওই ঘটনায় তৎকালীন চেয়ারম্যান হালিম মোল্লা ও সাবেক চেয়ারম্যান আজিবর বালীসহ ৩০ জন এবং অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনের নামে পালং থানায় একটি মামলা করেন নিহত ছামাদ মাস্টারের স্ত্রী।
মামলাটি তদন্তের পর একই বছরের ১৪ আগস্ট পালং থানার এসআই শহীদুল ইসলাম ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। পরে মামলাটি নারাজির ভিত্তিতে অধিকতর তদন্তে যায়। অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ১১ মে একই থানার এসআই সুলতান মাহমুদ ১৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলাটি বিচারের জন্য শরীয়তপুরের সিনিয়র দায়রা জজ আদালতে ২০১৪ সালে যায়। সেখানে ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
পরে ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর প্রজ্ঞাপন জারি হয়। ওই বছরের ২১ জুন মামলার নথি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসার পর একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।
খুলনা গেজেট/এনএম