বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি প্রফেসর ড. এম কোরবান আলী বলেন, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন শিক্ষকদের আদর্শ শিক্ষক হিসাবে গড়ে তোলার একটি কারখানা। যারা আমরা এই শিক্ষক পরিষদের ব্যানারে সম্পৃক্ত হয়েছি এখানে লক্ষ লক্ষ শিক্ষক ট্রাডিশনাল শিক্ষক, শিক্ষকের নামে শিক্ষক। এই শিক্ষকদের ভিতরে অনেকের সুনাম এবং দূর্নাম রয়েছে। মানুষের সুমান বাইরে কম আসে, আর দুর্নাম দ্রুত ছড়ায়। আমাদের দায়িত্ব শিক্ষক সমাজকে এই দুর্নামর হাত থেকে রক্ষা করা । বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় করণের মাধ্যমে শিক্ষক সমাজের বৈষম্য দূরীকরণ নিশ্চিত করার দাবীতে শনিবার (১৪ জুন) বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা শহরের শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন সাতক্ষীরা জেলা শাখা আয়োজিত এক শিক্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গত ৫ আগষ্ট সহস্রাধিক প্রাণের বিনিময় আমরা আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের অনুগ্রহ লাভ করেছি। রাব্বুল আল আমিন আমাদেরকে পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। যে শিক্ষকের ভিতরে মানের ঘাটতি আছে, যার কারণে সমগ্র শিক্ষক সমাজ ঘৃনিত, নিন্দিত ও অপমানিত হয়। এই পরিবেশে সেই সব শিক্ষক যারা মানের দিক থেকে অত্যান্ত পিছনের দিকে তাদেরকে এগিয়ে আনতে হবে। এজন্য শুধুমাত্র জামায়াত-শিবির দেখলে হবে না সাতক্ষীরার প্রতিটি শিক্ষকের কাছে আমাদের দাওয়াত পৌছে দিতে হবে। এই কাজটি করতে পারলে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হবে।
বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন সাতক্ষীরা শাখার সভাপতি উপাধ্যক্ষক আব্দুস সবুরের সভাপতিত্ব ও সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আশফাকুর রহমান বিপুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশ বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার শিক্ষা ও বিশিষ্ট আলেম ড. খলিলুর রহমান মাদানী, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মুহাঃ রবিউল ইসলাম, বাংলাদেশ মাদ্রসা শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ ড. মাওলানা শাহজান মাদানি প্রমুখ।
প্রধান অতিথি অরো বলেন, আমাদের ভাই যারা এই ফেডারেশনের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন, এদের ভিতরে অনেকই একাডেমিক্যালি দূর্বল। পড়াশুনা করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন কিন্তু ক্লাসে গিয়ে স্বতস্ফূর্তভাবে পারফরমেন্স করতে পারছেন না। কাজেই যাদের ভিতরে একাডেমিক ঘাততি আছে তাদেরকে প্রশিক্ষন দিতে হবে।
সব শিক্ষকদের জাতীয় করণের দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যে টাকাগুলো দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে সেই টাকা ফিরিয়ে এনে ফান্ডে জমা করনে, দেখবেন সব শিক্ষকদের আমরা নিয়মিত বেতন দিতে পারবো। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, টাকা না দিতে পারলে জাতীয় করণের ঘোষনা দিন এবং পর্যায়ক্রমে তাদের রেগুলার করার চেষ্টা করলে হয়ে যাবে। আমাদের যে সম্পদ আছে এই সম্পদ দিয়ে এগুলো করা যাবে। এখন দরকার হলো সিনসিয়ারিটির। শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের উপকারে আসে সেই রকম মানবসম্পদে গড়ে তুলে তাদেরকে মানসম্মত বেতন দিয়ে জীবন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দানের আহবান জানান তিনি।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক পরিষদের সেক্রেটারী মো. আব্দুর রহিম সরকার, সাতক্ষীরা আলিয়া কামিল মাদ্রাসার সভাপতি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, আগরদাড়ি আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, শ্যামনগর আসনের সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাওলানা আজিজুর রহমান।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ২০২৪ এর জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার বিপ্লবের সুফল জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিকট পৌছে দিতে হবে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়া বর্তমান সময়ের দাবি। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে উপনিবেশিক মানুষিকতা মুক্ত মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন পরমত সহিষ্ণু সহাবস্থানে বিশ্বাসী সৎ দক্ষ, দেশপ্রেমিক সৃজনশীল ও যোগ্য নাগরিক তৈরির জন্য শিক্ষা সংস্কার করতে হবে।
সম্মেলনে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষা ফেডারেশন সাতক্ষীরা জেলা শাখার পক্ষ থেকে সকল শিক্ষকদের ন্যায় সংগত ১৪ দফা দাবি মেনে নেয়ার জন্য জেলা শিক্ষক সম্মেলন থেকে অন্তরর্বতীকালীন সরকারের নিকট জোর দাবি জানানো হয়।
খুলনা গেজেট/এএজে