খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী থানার তেলিগাতী কুয়েট রোডে অবস্থিত সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ। ১৯৭০ সালে ৮ দশমিক ২৭ একর জমির উপর এটি নির্মিত হয়। সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গুণগত এবং মানসম্পন্ন শিক্ষক তৈরি করাই হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও স্বাধীনতার পর আনুষ্ঠানিকভাবে এর কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বিধান চন্দ্র রায় জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি ২৯ হাজার ৯৪৫ জন শিক্ষককে বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। এদের মধ্যে ১০ এবং ১২ মাস মেয়াদী বিএড প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা ১২ হাজার ৪৫০ জন, ৪ বছর মেয়াদী বি.এড অনার্স প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা ২৬৭ জন, ১২ মাস মেয়াদী এম.এড প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা ৫২৫ জন। এ ছাড়া বাকীদের সর্বনিম্ন ৩ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৩ মাস মেয়াদী বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক স্বল্পকালীন কোর্স, মাধ্যমিক স্তর ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের আইসিটি প্রশিক্ষণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কোর্স, জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা (LSBE) ইয়ং চ্যাম্পিয়নশীপ প্রশিক্ষণ, মাদ্রাসা শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ এবং সরকার কর্তৃক আরোপিত বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
বিধান চন্দ্র রায় খুলনা গেজেটকে বলেন , শিক্ষার মান উন্নতির জন্য ভালো মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গুণগত প্রশিক্ষণ অপরিহার্য যেটা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, খুলনা নিরলসভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে মেধাগত উৎকর্ষের সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিখন এবং শেখানোর পদ্ধতি, কৌশল, বাচনভঙ্গি প্রয়োগের কৌশল, ক্লাসের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগিয়ে কিভাবে ক্লাসটা প্রাণবন্ত করা যায় এ সকল বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটিতে ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সর্বশেষ চলতি বছর বি.এড কোর্সে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও বর্তমানে উক্ত কোর্সে শিক্ষার্থী রয়েছে ৮৫ জন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৪ টি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আরো ৩৮ টি বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বেসরকারি অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়। যেহেতু সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেটের মান একই, সে কারণে শিক্ষার্থীরা বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে নিয়মিত ক্লাস না করেও বিকল্প উপায়ে সার্টিফিকেট অর্জন করছেন। যেহেতু আমাদের এখানে ৮০% ভাগ ক্লাসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক, হাজিরায় নম্বর আছে, Teaching practice আছে। বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এজাতীয় চাপগুলো না থাকায় শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়ে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করছে। এতে করে তাদের শিখন শেখানোর পদ্ধতি কৌশল, teaching capacity সহ অনেক কিছুরই ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব মহোদয় শিক্ষকদের পেশাগত শিখন-শেখানো দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অতি সম্প্রতি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষদের সাথে ১টি ওয়ার্কশপে বলেছেন, খুব দ্রুতই মাধ্যমিক শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক ফাউন্ডেশন কোর্স চালু করা হবে। এতে করে শিক্ষকদের প্রশাসনিক দক্ষতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমান প্রতিষ্ঠানটিতে ৩৫ জন শিক্ষক এবং সমান সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। নয়নাভিরাম সুপরিসর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য রয়েছে ৩টি আবাসিক হল, খেলার মাঠ, অতিথী ভবন, শেখ হাসিনা আইসিটি ভবন ইত্যাদি।
অন্যদিকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভাগীয় এ প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি। নামমাত্র কয়েকবার ভবনগুলোর সংস্কার কাজ হয়েছে। ভবনগুলো পুরাতন হওয়ায় ক্রমান্বয়ে এগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় রূপ নিচ্ছে।
বর্ষা মৌসুূমে খেলার মাঠ, প্রশাসনিক ভবনের নীচ তলা, অতিথী ভবন, আবাসিক ভবনসহ প্রতিষ্ঠানের আভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে পানি জমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. শেখ মোঃ রেজাউল করিম খুলনা গেজেটকে বলেন, নতুন একাডেমিক ভবন, ডরমেটরি এবং আবাসিক হোস্টে নির্মাণের জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কয়েকবার প্রস্তাবনা দিয়েছি। বর্ষা মৌসুমে প্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতাসহ অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।