খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

ভিডিও সরাতে হাইকোর্টের নির্দেশ

‘শারীরিক সম্পর্কে রাজি না হওয়ায় বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ছেড়ে দেয় ফেসবুকে’

গেজেট ডেস্ক

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ধর্ষণের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বখাটেরা বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় বলে ভুক্তভোগী নারী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন। গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকের এই ঘটনায় ওই নারী রোববার বেগমগঞ্জ থানায় দুটি মামলা করেন। একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে, অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। দুই মামলাতেই নয়জনকে আসামি করা হয়েছে।

এদিকে, গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (৫ অক্টোবর) সকালে, বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন। পরে, দুপুরে এ বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে। এ সময় হাইকোর্ট প্রশ্ন করেন, ‘এক মাস এই ঘটনা চাপা থাকলো কি করে, পুলিশ কি করছে। ফেসবুকে না ছড়ালে তো ঘটনা গোপনই থাকতো।’

মামলার এজাহারের ওই নারী অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে বেঁধে রেখে আসামিরা তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তারা এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করে মোবাইলে। গত এক মাস ধরে তারা এই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলে তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিচ্ছিল। তিনি এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা ফেসবুকে ভিডিওটি ছেড়ে দেয়।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ভুক্তভোগী ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে বাদলসহ আসামিরা। গত এক মাস ধরে আসামিরা এই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার কথা বলে তাকে কুপ্রস্তাব দিচ্ছিলেন। তিনি কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা রোববার ফেসবুকে ভিডিওটি ছেড়ে দেয়।

মামলার প্রধান আসামি বাদলসহ এ মামলায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারের নাম এ মামলার এজাহারে না থাকলেও তাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

বেগমগঞ্জের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের এক সদস্য জানান, ওই নারীর ১৮ বছর আগে বিয়ে হয়। তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় কয়েক বছর আগে তিনি বাপের বাড়ি চলে আসেন। তার এক ছেলে ও মেয়ে আছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে ওই নারী ছেলে ও এক ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। সম্প্রতি তার স্বামী তার কাছে আসা-যাওয়া করতে শুরু করেন। এ নিয়ে কয়েকজন যুবক আপত্তি জানিয়ে সেদিন ওই নারীকে নির্যাতন করেন। ঘটনার দিন ওই নারী তার স্বামীর সঙ্গেই ছিলেন। নির্যাতনকারীরা তার স্বামীকেও আটক করে নিয়ে যায়। পরে ওই নারীর ভাই ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। ওই নারীর মা নেই। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন।

জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই তারা বিষয়টি জানতে পারেন। তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেন। নির্যাতনের শিকার নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। রাতে ওই নারী মামলা করেন।

পুলিশ এ ঘটনায় নয় জনকে চিহ্নিত করেছে। নির্যাতনে জড়িতরা হলেন- বাদল, দেলোয়ার, আবদুর রহিম, রহমতউল্লাহ, আবুল কালাম, ইসরাফিল, সাজু, সামশুদ্দিন সুমন, আবদুর রব চৌধুরী ওরফে লম্বা চৌধুরী। এদের মধ্যে দেলোয়ার ও বাদল র্যা বের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। আর আবদুর রহিম ও রহমত উল্লাকে বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার করে।

প্রসঙ্গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকায় ওই গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখেন স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা। এর পর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। সেটি ছড়িয়ে দেন ইন্টারনেটে। এ ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

 

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!