চলছে শাবান মাস। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, রজব আল্লাহর তায়ালার মাস, শাবান নবীজীর মাস, রমজান হলো উম্মতের মাস। রজব মাসে ইবাদতের মাধ্যমে অন্তরের ভূমি কর্ষণ করা, শাবান মাসে আরো বেশি ইবাদতের মাধ্যমে সেই জমিতে বীজ বপন করা, রমজান মাসে সর্বাধিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সফলতার ফসল ঘরে তোলা হয়। রমজান মাসের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের নফল রোজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সহিহ হাদিসে আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসুলুল্লাহ (স.) কে আমি শাবান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে এত অধিক নফল রোজা পালন করতে দেখিনি। তিনি যেন গোটা শাবান মাসই রোজা পালন করতেন। তিনি সামান্য (কয়টি দিন) ব্যতীত গোটা শাবান মাস রোজা রাখতেন (সহিহ মুসলিম)। আর এক হাদিসে এসেছে, আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাস ব্যাতীত বছরের অন্য কোন মাসে এত অধিক রোজা পালন করতেন না। তিনি বলতেনঃ “তোমরা যথাসাধ্য অধিক পরিমাণে ভাল কাজ কর। কারণ আল্লাাহ তা’আলা সওয়াব দিতে কখনও ক্লান্ত হন না বরং তোমরাই আমল করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়” (মুসলিম:২৫৯৪)।
শাবান মাসে আমরা যে সমস্ত আমল করতে পারি:
- রসুলুল্লাহ (স.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান’। অর্থাৎ- ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ:২৫৯, বায়হাকি: ৩ :৩৭৫)
- শাবানে রমজানের প্রস্তুতি গহণ এবং সে লক্ষ্যে বেশী বেশী আমল করা নবীজির সুন্নত।
- শাবান বেশী বেশী রোজা রাখা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমানিত।
- শুধুমাত্র শাবানের শেষের কয়েকদিন রোজা ছেড়ে দেওয়া উত্তম যাতে তা রমজারে সাথে মিশে না যায়।
- বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন এবং প্রসিদ্ধ ইমামগণ শাবান মাস এলেই বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করতেন।
- বেশি বেশি দান সাদাকাহ করা যাতে রমজানজুড়েও তার ধারা অব্যহত থাকে।
- বেশি বেশি ইসতিগফার করা যা মানুষকে রমজানজুড়ে আমলে উদ্যোগী করে তোলে।
- রমজান মাসের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসের তারিখের হিসাব রাখা বিশেষ জরুরি একটি সুন্নাত আমল। হাদিস শরিফে নবীজী সা: বলেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’ (সিলসিলাতুস সহিহাহ, আলবানি ২:১০৩)
- রমজানের নতুন চাঁদ দেখা সুন্নাত। দেখতে না পারলেও তার দেখার জন্য চেষ্টা করা।
- রমজানের গুরুত্ব মানুষের মাঝে তুলে ধরা যাতে মানুষ তার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারে। রসুলুল্লাহ (স.) শাবানের শেষের দিকে রমজানের ফজিলত তুলে ধরে সাহাবীদেরকে উৎসাহিত করতেন।
গোটা শাবান মাসটাই বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতর্পূণ মাস। মহান আল্লাপাক আমাদের সবাইকে শাবান মাসে বেশী বেশী আমল করার তৗফিক দান করেন এবং রমজানের প্রস্তুতি নেয়ার তৌফিক দান করেন। (লেখক: মৎস্য-বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)
খুলনা গেজেট/ টিএ