এক যুগ ধরে নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারসহ গুমের ঘটনায় ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠকে সরকার সমর্থকদের বাধা এবং বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাইডেন প্রশাসন। ওয়াশিংটনে পৃথক ব্রিফিংয়ে অভিন্ন ওই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএস সি)’র স্ট্র্যাটিজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যামিরাল জন কিরবি খোলাসা করেই বলেন, বাংলাদেশের অব্যাহত মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষায় পদক্ষেপ নিতেও যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন তিনি। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ওই ব্রিফ্রিংয়ে এনএসসির স্ট্র্যাটিজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যামিরাল জন কিরবি আরও বলেন, বাংলাদেশে যেসব বিষয়ে মানবাধিকারের উন্নতি হচ্ছে না নিশ্চিতভাবে সেগুলো নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে। দেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার পরিবেশ বাংলাদেশে তৈরি হোক। ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী প্রশ্নটি করেছিলেন। এদিকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়েও সাংবাদিক আনসারীর অভিন্ন প্রশ্নের জবাবে মূখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল রাষ্ট্রদুতের গাড়ির গতিরোধ করায় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ব্রিফিংয়ে প্রশ্নকর্তা মিস্টার আনসারী বলেন আমার প্রশ্ন বাংলাদেশ ইস্যুতে। বুধবার সকালে বিরোধীদলের নিখোঁজ কর্মী সাজেদুল ইসলামের বাসায় পরিদর্শনের সময় সেখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলেন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা।
সাজেদুল ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। বাংলাদেশে গুম আর বিচারবর্হিভূত হত্যা একটা নৈমত্তিক ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে র্যাব এবং এর ৬ অফিসারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে সেখানে বৈঠক শেষ না করেই বের হয়ে আসেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, এছাড়া গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে ঘটনাটির পরপরই পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে গিয়ে তিনি তার উদ্বেগের কথা জানিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশে তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আপনারা উদ্বিগ্ন কি-না? মুশফিক স্পোকসপারসনের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশের সরকার বিরোধী দলের ওপর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে, বিএনপির মহাসচিব এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে সমাবেশ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছেনা। জনগণ গণতন্ত্র আর ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করছে। এবিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? জবাবে এনএস সি’র স্ট্র্যাটিজিক কমিউনিকেশন পরিচালক অ্যামিরালজন কিরবি বলেন: আমরা অবশ্যই আমাদের রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। আপনি সঠিক বলেছেন।নিরাপত্তাজনিত কারণে বৈঠকটি সংক্ষিপ্ত করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আমরা রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছি। বাংলাদেশের গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ এবং নির্বাচন এই তিন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট করে বাইডেন প্রশাসনের ওই কর্মকর্তা বলেন, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজকে স্বাধীন কাজ করার এবং উদ্বেগ প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। একইভাবে নির্বাচন নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে করার পরিবেশ থাকতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র তার এই মৌলিক নীতিগুলোর ব্যাপারে বিশ্বজুড়েই সোচ্চার উল্লেখ করে জন কিরবি জানান, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও আমাদের একই অবস্থান।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত
এদিকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রিন্সিপাল ডেপুটি স্পোকসপারসন বেদান্ত প্যাটেলের উদ্দেশ্য সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল বলেন, বাংলাদেশে বিরোধীরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ বিরোধী দলের হাজার হাজার কর্মী কারাগারে। তাছাড়া বুধবার মার্কিন দূতের গাড়িবহরের গতিরোধের এটি দ্বিতীয় ঘটনা। ২০১৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের গাড়ি বহরে আক্রমণ করেছিল সরকারপন্থী কর্মীরা। এসব বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কি? জবাবে প্রশ্নকর্তা সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মূখপাত্র বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী শান্তি, নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত হিসেবে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখি চলেছে। ঢাকা-ওয়াশিংটন (দ্বিপক্ষীয়) সম্পর্কের মূল উপাদান হিসেবে স্বাধীন গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্থানসংকোচনে ঘটনাগুলোতে আমরা যখন উদ্বেগ প্রকাশ করি তখন মানবাধিকারের কথাও বলি। প্রশ্নকর্তার উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্র দপ্তরের মূখপাত্র বলেন, আপনি একটি নির্দিষ্ট বৈঠকের কথা বলেছেন। ১৪ই ডিসেম্বর দিনের শুরুর বৈঠকটি নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে শেষ না করেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের কর্মীদের স্থান ত্যাগ করতে হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের শঙ্কা এবং উদ্বেগের বিষয়টি আমরা বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নজরে এনেছি।