খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ০৮ সেপ্টেম্বর (রবিবার) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ডিসিপ্লিনের ’১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ-এর স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে বিকাল ৩টা থেকে শুরু হওয়া এ স্মরণ সভা চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
সভায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৫টি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- (১) ১৮ জুলাই শহিদ মীর মুগ্ধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ও যথাযথ মর্যাদায় পালন করা, (২) মেইন গেটের নাম শহিদ মীর মুগ্ধ তোরণ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া, (৩) টিএসসির সামনে শহিদ মীর মুগ্ধ’র স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতিফলক নির্মাণ, (৪) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে রাষ্ট্রের কাছে শহিদ মীর মুগ্ধ হত্যার বিচার চেয়ে আবেদন, (৫) এই আন্দোলনে সকল শহিদের স্মরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে জুলাই গণহত্যা নামে একটি স্মৃতি কর্নার করা।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো ন্যায্য। এ বিষয়ে আমার যা করণীয় আছে তা করবো। তবে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ না পর্যন্ত এ দাবিগুলো পূরণ করা সম্ভব হবে না। এ দাবির সাথে তিনি যোগ করে বলেন, মুগ্ধ স্মৃতির উদ্দেশ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক আবাসিক হল, প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে ‘মুগ্ধ পানি সরবরাহ কর্নার’ করা হবে। মৃত্যুর আগে আন্দোলনের মধ্যে ‘পানি লাগবে পানি’- মুগ্ধ’র এই কথা আমাদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। তাই দেশের প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘পানি লাগবে পানি’ এই শ্লোগান লিখে মুগ্ধ কর্নার করার উদ্যোগ নিতে হবে। যার শুরুটা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হবে। পর্যায়ক্রমে তা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। মুগ্ধ’র এই মুগ্ধতা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টিতে শহিদ মীর মুগ্ধসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল শহিদের অবদান রয়েছে। শিক্ষার্থীরা মুগ্ধ’র নামে প্রধান গেটের নামকরণ করেছে, এটি আনুষ্ঠানিকভাবে করা হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন স্মরণ সভা আগে কখনও হয়নি। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, মুগ্ধ-আবু সাঈদরা নিজেদের জীবন দিয়ে দেশকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। মুগ্ধদের আত্মত্যাগ দেশকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে। এখন তাদের স্বপ্ন আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা নতুন স্বাধীনতার পর যেভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, দেশ সংস্কার এবং বন্যার পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে।
স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. এস এম মাহবুবুর রহমান, শহিদ মীর মুগ্ধ’র বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত ও জমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। সভাপতিত্ব করেন গণিত ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. আজমল হুদা।
স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. শাহজাহান কবীর, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ খান, গণিত ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. এ টি এম জহিরুদ্দিন, ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. গোলাম রাক্কিবু, কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন ‘বন্ধন’ এর সাধারণ সম্পাদক সহকারী রেজিস্ট্রার এস এম মোহাম্মদ আলী, গণিত ডিসিপ্লিনের অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন, মুগ্ধকে নিয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মো. মতিউর রহমান।
শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে স্মৃতিচারণ করেন ’১৭ ব্যাচের মোস্তাক, ’১৯ ব্যাচের অপূর্ব, শাহরিয়ার, সাকিব, রবিউল, জাকির, ’২০ ব্যাচের শামীম, সাইফ, বাঁধন, সাকিব, প্রাপ্তি, রিয়াদ, হৃদয়, ফাহাদ, ’২১ ব্যাচের কাশেম আলী, আয়েশা সিদ্দিকা, দুর্জয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ’১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী রিফাহ তাসনিয়া ও ’২০ ব্যাচের সাইফ নেওয়াজ।
স্মরণ সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালকসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ পাঠের মাধ্যমে স্মরণ সভা শুরু হয়। সভার শুরুতে শহিদ মীর মুগ্ধসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল শহিদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সভায় শহিদ মীর মুগ্ধ’র সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করা হয় এবং তাঁর জীবনীর ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। – খবর বিজ্ঞপ্তির।