সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলার পাঁচ গ্রামের মানুষ বাঘ আতঙ্কে ভুগছে। বাঘের আক্রমণের শিকার হয়েছে গরু-মহিষ। সন্ধ্যা হলেই গ্রামের দোকান বন্ধ করে ঘরে ফিরছেন দোকানিরা। গ্রাম পুলিশ রাতে পাহারায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। এমন অবস্থা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর, উত্তর রাজাপুর, পশ্চিম রাজাপুর, ধানসাগর ও পশ্চিম বানিয়াখালী গ্রামসহ আশপাশের এলাকায়।
উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর, উত্তর রাজাপুর, পশ্চিম রাজাপুর ও ধানসাগরের গ্রামবাসীর মুখে মুখে এখন বাঘ আতঙ্কের কথা।
গ্রামবাসী জানায়, লোকালয় সংলগ্ন পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন এলাকার বনে বাঘ ও বন্য শুকরের উপদ্রব বেড়েছে। সন্ধ্যা হলে বনের ছোট খালের পাড়ে বাঘ ক্রমাগত হুংকার ছাড়ে। ভোলা নদী ভরাট হয়ে ছোট খালে পরিণত হওয়ায় সহজেই মাঝে মাঝে বাঘ গ্রামে চলে আসে।
৫ মে দিবাগত রাতে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার বন থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে উপজেলার খেজুরবাড়ীয়া গ্রামে চলে আসে। ঐ রাতে মসজিদ থেকে মাইকিং করে এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হয়।
৭ মে রাতে পশ্চিম বানিয়াখালী গ্রামের মানুষ বাঘ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করে। পশ্চিম বানিয়াখালী গ্রামে ৯ মে রাতে আবারও বাঘের দেখা মেলে। জাকির হাওলাদারের বাড়ির আঙিনায় বাঘের পায়ের অনেকগুলো ছাপ দেখা যায়।
২৪ এপ্রিল দুপুরে সুন্দরবনের কিনারে ঘাস খাওয়ার সময় ধানসাগর গ্রামের আফজাল হাওলাদারের একটি গরু বাঘের আক্রমণে গুরুতর জখম হয়।
৩১ মার্চ দুপুরে দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের সোবাহান হাওলাদারের একটি মহিষ খালের চরে ঘাস খাওয়ার সময় দাসেরভারানী ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির বন থেকে একটি বাঘ লোকালয়ে এসে মহিষটিকে আক্রমণ করে।
বাঘের কামড়ে গুরুতর জখম মহিষটির ডাক চিৎকারে গ্রামবাসী এগিয়ে গেলে বাঘ খাল সাতরে দ্রুত বনের মধ্যে চলে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী দেলোয়ার হোসেন তালুকদার জানিয়েছেন। দাসেরভারাণী ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
৩ নম্বর রায়েন্দা ইউনিয়নের ১ নম্বর দক্ষিণ রাজাপুর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ শহিদুল ইসলাম ও ১ নম্বর ধানসাগর ইউনিয়নের ধানসাগর ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, লোকালয়ের কাছে বাঘের আনাগোনা বেড়েছে। রাতে পাহারা দিতে আমরা হিমশিম খাই। লোকজন নিয়ে সতর্কভাবে চলাফেরা করি। ধানসাগর টগড়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিক সোমা তালুকদার বলেন, সন্ধ্যা নামলে ঘর থেকে কেউ বের হয় না।
ধানসাগর টগড়াবাড়ী এলাকার রাস্তার পাশের ছোট দোকানি আমিন চৌকিদার বলেন, সন্ধ্যা হলেই বাঘ আসার আশঙ্কায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি চলে যাই। রাতের আঁধারে বন্য শূকর দল বেঁধে গ্রামে ঢুকে ফসল নষ্ট করে। ১ নম্বর ধানসাগর ইউপি চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম টিপু বলেন, বাঘের আনাগোনায় ধানসাগর ইউনিয়নের পশ্চিম রাজাপুর ও ধানসাগর টগড়াবাড়ী এলাকায় মানুষ সর্বদা বাঘ আতঙ্কে থাকেন। ২ নম্বর খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বলেন, পশ্চিম বানিয়াখালী গ্রামের মানুষ বাঘ আতঙ্কে রয়েছেন।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবনে বাঘের উপদ্রব থাকাটাই স্বাভাবিক। বনরক্ষী, ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যরা সর্বদা গ্রামবাসীকে সতর্ক থাকার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন। বনসংলগ্ন ভরাট হওয়া ভোলা নদী পুনঃখননসহ লোকালয়ে বন্যপ্রাণী ঠেকাতে বনের সীমনায় নাইলনের ফেন্সিং দেওয়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, এই প্রকল্পের কাজ দ্রুতই শুরু হবে।