খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

শবে কদর মানে ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদত

মুফতি আঃ শাকুর যশোরী

পবিত্র মাহে রমাযান চলছে। একটি একটি করে ২১টি রোজাতো চলেই গেল। হতে পারে তা একেবারে জীবন থেকেই হারিয়ে গেল। রমাযানের প্রতিটি রাতই দামী। প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণ ও প্রতিটি মুহুর্তই দামী। তার পরও মহান আল্লাহর বিশেষ ঘোষণা বর্ণিত হলো সূরা কদরে। তিনি ইরশাদ করেন- {لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ } [القدر: 3] শবে কদর হলো হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। সূরা কদর- (৩)। অর্থাৎ একটি শবে কদরের ইবাদত এমন হাজার মাসের (৮৩ বছর ৪ মাসের) ইবাদতের চেয়ে উত্তম যাতে শবে কদর নেই। (তাফসীরে বাগবী- ৫/২৮৮)। এ রাতে বান্দাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে এত অধীক কল্যাণ দান করা হয় যা হাজার মাসেও (৮৩ বছর ৪ মাস) পাওয়া যায়না। আবার ‘হাজার মাস’ কথাটার অর্থ এও হতে পারে যে, এক শবে কদরের ইবাদত হাজার হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। কেননা আরবের লোকেরা ‘হাজার’ কথাটা বস্তুর শেষ সীমা বর্ণনা করার জন্য বলে থাকে। (তাফসীরে কুরতুবী-২০/১৩১)।

সম্মানিত পাঠক! আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো- আল্লাহ তাআলা হাজার মাসের (৮৩ বছর ৪ মাসের) চেয়ে উত্তম বলেছেন। তবে কত উত্তম তা বলেননি। বুঝার ব্যাপার হলো এই যে, উত্তমতো তিনি বলেছেন যার চেয়ে উত্তম কেউ নেই, যার চেয়ে উত্তম কেউ করতে পারে না এবং যার চেয়ে উত্তম কেউ দিতে পারে না। সুতরাং তার দেয়া উত্তমটাও হবে সকল উত্তমের চেয়ে উত্তম।

এ রাতেই বান্দার জন্য আগামী এক বছরের হায়াত, মউত, রিযিক, বৃষ্টি ও কে হজ্জ করবে না করবে ইত্যাদি ভাগ্যে নির্ধারিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য নিয়ন্ত্রক ফেরেশতার হাতে সুপর্দ করা হয়। সূরা দুখানের শুরুতেও এমনটাই বলো হয়েছে। (তাফসীরে কুরতুবী- ২০/১৩০)। সঙ্গত কারণেই এ রাতকে ভাগ্য রজনি বলা হয়।

প্রিয় নবীজি স. ইরশাদ করেন- যে ঈমানদার সওয়াবের আশা নিয়ে এখলাসের সাথে শবে কদরে ইবাদত করবে তার পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ঈমানদার সওয়াবের আশা নিয়ে এখলাসের সাথে রমাযানের রোজা রাখবে তার পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারী- ৩/২৬-১৯০১)।

হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত যে, প্রিয় নবীজি স. রমাযানের ২য় দশকে ই’তিকাফ করতেন। এক বছর এরূপেই ই’তিকাফ করলেন। যখন একুশে রমাযানের রাত এল যে রাত পোহায়ে সকাল হলে তিনি ই’তিকাফ হতে বের হবেন, তখন তিনি বললেন- যারা আমার সংগে ই’তিকাফ করেছে তারা যেন শেষ দশকে ই’তিকাফ করে। আমাকে স্বপ্নে এই রাত (শবে কদর) দেখানো হয়েছিল, পরে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য আমি স্বপ্নে দেখতে পেয়েছি যে, ঐ রাতের পর সকালে আমি কাদা-পানির মধ্যে সিজদা করছি। তোমরা তা শেষ দশকে তালাশ কর এবং প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ কর। পরে এই রাতে আকাশ হতে বৃষ্টি হয়, মসজিদের ছাদে ছিল খেজুরের পাতার ছাউনি। ফলে মসজিদে টপটপ করে বৃষ্টি পড়তে লাগল। একুশের রাতের সকালে রসূলুল্লাহ স.-এর কপালে কাদা-পনির চিহ্ন আমার এ দু’চোখ দেখতে পায়। (বুখারী- ১৯০০)।

হাদীসটি থেকে বোঝা গেল যে, শবে কদর রমাযানের শেষ দশকের যে কোন বেজোড় রাতে পাওয়া যায়। সুনির্দিষ্টভাবে রাতটিকে নির্ধারিত করার সুযোগ নেই। তবে অলোচ্য হাদীসে বর্ণিত আলামত হিসেবে কেউ কেউ ২০ রামাযান দিনগত রাত অর্থাৎ ২১ রমাযানের রাতকে শবে কদর বলেছেন। আবার কেউ কেউ তিরমিযী শরীফে বর্ণিত ৭৯১ নং হাদীসের আলোকে ২৬ রমাযানের দিনগত রাত অর্থাৎ ২৭ রামাযানের রাতকে শবে কদর বলেছেন। উক্ত হাদীসে রাতটির আলামত হিসেবে বলা হয়েছে যে, এটি এমন একটি রাত যার পরবর্তী সকালে উদিত সূর্য্যের আলোকরশ্মি থাকে না। (তাফসীরে কুরতুবি- ২০/১৩৪)। এ ছাড়াও আরো কিছু আলামত বর্ণিত হয়েছে।

প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর কাজ হলো সকল প্রকার গুনাহ বর্জন করা এবং নামায, তিলাওয়াত, জিকির, দুআ ও দান-ছদকা ইত্যাদি নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। রমাযান আসলে এ গুলোর প্রতি আরো যত্নবান হওয়া, রামাযানের শেষ দশকে অতঃপর শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে আরো আরো বেশি আল্লাহর দিকে ঝুকে পড়া এবং আয়শা রা. কর্তৃক বর্ণিত এ দুআটি বেশি বেশি পড়া। “اللَّهُمَّ، إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ، فَاعْفُ عَنِّي” (মুসনাদে আহমাদ- ৩৭/৪২৫)।

তবে যেহেতু শবে কদর অনির্দিষ্ট। রমাযানের শেষ দশকের যে কোন বেজোড় রাতে হতে পারে। তাই বান্দার উচিৎ হবে শুধু ২৭ রমাযানে মসজিদে মসজিদে ভিড় না করে ২১,২৩,২৫,২৭,ও ২৯ রমাযানের প্রত্যেক রাতেই আল্লাহর নৈকট্ট লাভের সমূহ চেষ্টা করে যাওয়া। মনে রাখতে হবে, ফরজ নামায ব্যাতীত আর সকল ইবাদত বাড়িতে করা উত্তম। তাই শুধু মসজিদে নয় বরং বাড়িতেও ইবাদত করা চায়। আল্লাহ সকলকে তাওফিক দান করুন। আমীন।

(লেখক : মুহাদ্দিস, ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া মাদরাসা, খুলনা।)




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!