পাকিস্তানের নির্বাচনকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন, তা শনিবার (১১ আগস্ট) জানা যাবে। কারণ ওই দিনই বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং বিরোধী দলীয় নেতা রাজা রিয়াজ প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে একটি নাম প্রস্তাব করবেন।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন আরিফ আলভি। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সংবিধানের ২২৪ নম্বর ধারার ১ নং উপধারা অনুসারে, প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর বিদায়ী পার্লামেন্টের বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নাম প্রেসিডেন্টের কাছে প্রস্তাব করবেন প্রধানমন্ত্রী এবং তা করতে হবে (পার্লামেন্টে ভেঙে দেওয়ার) ৩ দিনের মধ্যে। আগামীকাল শনিবার সেই ৩ দিনের শেষ দিন।’
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের পরামর্শে গত ৯ আগস্ট বুধবার পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্ট ভেঙে যাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেবে এবং তারপর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেশ কয়েক জনের নাম শোনা যাচ্ছে। সদ্য বিদায়ী জোট সরকারের শরিক পাকিস্তান পিপলস পার্টি ইতোমধ্যে ২ জনের নাম প্রস্তাব করেছে; এরা হলেন এরা হলেন দেশটির সাবেক কূটনীতিক জলিল আব্বাস জিলানি, সাবেক প্রধান বিচারপতি তসাদুক হোসেন জিলানি।
অপর জোটসঙ্গী মুত্তাহিদা কওমী মুভমেন্ট এ পদে প্রস্তাব করছে সিন্ধু প্রদেশের গভর্নর কামরান তেসোরির নাম।
এছাড়া জোট সরকারের সবচেয়ে বড় শরিক পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) তিন জন জেষ্ঠ্য নেতার নামও সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রীর তালিকায় রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসি এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মিয়াঁ সুমরো।
তবে ৬ জনের নামের যে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হয়েছে, তাতে এদের নাম রয়েছে কিনা— এখনও নিশ্চিত নয়।
এই সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে একজনের নাম প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি বরাবর প্রস্তাব করতে হবে শেহবাজকে এবং বিরোধী দলীয় নেতা রাজা রিয়াজের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই প্রস্তাব করতে হবে সেই নাম।
সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার এক প্রতিবেদনে ডন জানিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নাম চুড়ান্ত করতে বৃহস্পতি ও শুক্রবার মোট ২ দফা বৈঠক করেছেন শেহবাজ শরিফ এবং রাজা রিয়াজ। শনিবার তৃতীয় দফা বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট বরাবর তালিকার ৬টি নাম থেকে যে কোনো একজনের নাম প্রস্তাব করবেন শেহবাজ।
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা যদি তিন দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের জন্য কাউকে চূড়ান্ত করতে না পারেন, তাহলে শেষ পর্যন্ত তা সংসদীয় কমিটিতে যাবে। পাকিস্তানের আইন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা তাদের পছন্দের প্রার্থীর নাম সংসদীয় কমিটিতে পাঠাবেন।
পরে সংসদীয় কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর নাম চূড়ান্ত করতে হবে। যদি কমিটিও ঐকমত্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) দুদিনের মধ্যে বিরোধীদল ও সরকারি দলের প্রস্তাবিত প্রার্থীদের মধ্যে থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত করবে।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে যাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু দেশটির বিদায়ী সরকার নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে বলে ইতিমধ্যে সতর্ক করে দিয়েছে।
দেশটিতে জনশুমারির ভিত্তিতে নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘জনশুমারি শেষ হলেই নির্বাচন হবে। এ জন্য তিন থেকে চার মাস সময়ের দরকার। ফলে নির্বাচন আগামী বছর পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে।’
খুলনা গেজেট/কেডি