খুলনা, বাংলাদেশ | ১৭ আষাঢ়, ১৪৩১ | ১ জুলাই, ২০২৪

Breaking News

  এই দেশে আর কখনোই জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদের উত্থান হবে না : র‌্যাব ডিজি
  ডিজেল, কেরোসিনের দাম কমলো এক টাকা। অপরিবর্তিত থাকছে পেট্রোল-অকটেন।

শখের বসে লালন পালন, ৪০ মণের নুন্টুকে দশ লাখ টাকায় বিক্রির প্রত্যাশা (ভিডিও)

একরামুল হোসেন লিপু

নিজ গোয়ালে অস্ট্রেলিয়ান প্রজাতির ফ্রিজিয়ান গাভী ঘণ্টুর পেটে ২০২০ সালের ১৮ মে জন্ম নেয় এড়ে বাচুর। নাম রাখা হয় নুন্টু। সেই নুন্টু এখন কালো রংয়ের বিশাল আকৃতির পরিপক্ক এড়ে গরু। শখ করে নিজ সন্তানের মতো আদর, সোহাগ, ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে নুন্টুকে লালন-পালন করে বড় করেছেন স্কুল শিক্ষক মাস্টার মোজাহার আলী দম্পতি। নুন্টুর বয়স এখন ৪ বছর ১ মাস। উচ্চতা সাড়ে ৫ ফুট, দৈর্ঘ্য সাড়ে দশ ফুট, ওজন প্রায় ৪০ মণ বা ১৬শ’ কেজি। দূর দুরান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ নন্টুকে দেখতে আসে। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি নন্টু বাড়ির ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে বিস্কুট, চা, কোল্ড ড্রিঙ্কস, ফলমূল খাওয়া শিখেছে। গত কোরবানির ঈদে নন্টুর দাম উঠেছিলো ৭ লাখ টাকা।

এবছর দাম উঠেছে ৮ লাখ টাকা। নুন্টুকে লালন-পালন করতে এ পর্যন্ত মালিকের খরচ হয়েছে ৭ লাখ টাকা। কোরবানির ঈদে শখের নুন্টুকে ১০ লাখ টাকায় বিক্রির প্রত্যাশা করছেন মাস্টার মোজাহার আলী। মাস্টার মোজাহার আলী খুলনার ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক। ২ মেয়ে, ১ ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে বসবাস করেন ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের দক্ষিণ মিকশিমিল গ্রামের পৈত্রিক ভিটায়।

মাস্টার মোজাহার আলী খুলনা গেজেটকে বলেন, শখ করে বিগত চার বছর যাবৎ গরুটি লালন পালন করতিছি। নিজের গোয়ালের বাচ্চা। তিনটা ছেলে মেয়ের সাথে আমি এটাকে আর একটা সন্তান মনে করি। অনেক যত্নে একে আমি লালন পালন করেছি। ক্ষমতা থাকলে কোরবানি দিয়ে দিতাম। আমি চাই গরুটার যেন সঠিক মূল্য পায়। কারণ গরুটাকে সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খৈল, কুড়া, ভুষি, আমার ঘেরের ঘাস খাওয়াইয়ে লালন পালন করেছি। এ বাদে আমার সন্তানরা যা খায় ধরেন, একটা বিস্কুট, এক কাপ চা, একটু পান, স্প্রাইট খাইলো সেগুলোতেও ও ভাগ পায়। গরুটা লালন-পালন করতে এ পর্যন্ত আমার ৭ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। ১০ লাখ টাকা হলে বিক্রি করে দিবো। আমার মাপার মেশিন নেই, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা যে এ্যাজামশন দিয়েছেন তাতে গরুটার ওজন প্রায় ৪০ মণ বা ১৬শ’ কেজি। আমার জানামতে ডুমুরিয়া উপজেলায় বা খুলনা জেলায় এত বড় গরু আর আছে কিনা জানা নেই। গত কোরবানির ঈদে ৭ লাখ টাকা দাম উঠিছিলো বিক্রি করি নাই। এ বছর সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ৮ লাখ টাকা। প্রতিদিন ক্রেতা আসতিছে।গতবার স্লিপ করিছি এবার যদি স্লিপ করি এই ভয়ে গরুটা আগামী ১২ তারিখ ঢাকার গাবতলী কুরবানীর হাটে নিয়ে যাবো।

মাস্টার মোজাহার আলীর স্ত্রী রুমিচা বেগম বলেন, করোনার ভেতর নুন্টুর জন্ম। ও এতো আদুরে আমরা যা খায় ওকে তাই দেওয়া লাগে। ছোটবেলা থেকে সবসময় ও আমাদের সাথে থাকতে পছন্দ করে। ছোটবেলায় আমার ছেলে-মেয়ে যখন দৌঁড়াতো ও পিছনে পিছনে দৌঁড়াতো। আমার ছেলে যদি বলতো ব্রেক ও ওই জায়গায় ব্রেক করে দাঁড়ায় যেতো। এভাবে ও’র আদরে বড় হয়ে ওঠা। দুই বছর যাবৎ ওকে গলায় দড়ি দিয়ে আটকাই রাখিছি। আমার ছেলেমেয়ের হাতে যা দেখে তাই ও স্বাদ যাচাই না করে তাই খায়। আমার ছেলে মেয়ে বাড়ি না থাকলে আমি কোন জায়গায় থাকি ও খেয়াল রাখে। ফোন বাজলে ও ডেকে দেয়। ওকে বিক্রি করে দিতে হবে এই কষ্টে পরিবারের সবার চোখের জলে দিন কাটছে।

মাস্টার মোজাহার আলীর কলেজ পড়ুয়া কন্যা রাবেয়া সুলতানা তিথি বলেন, আমাদের সঙ্গে নুন্টুর সম্পর্ক অনেক মিষ্টি। আমরা যখন ওর কাছে যায় ও শুয়ে থাকলে উঠে দাঁড়ায় থাকে। আর দাঁড়ায় থাকলে আমাদের দিকে তাকায় থাকে। ও কথা বলতে পারে না কিন্তু আমরা গেটের কাছে আসলে ও বুঝতে পারে, ডাক দেয়। ওর সঙ্গে কথা না বললে ওর মনটা খারাপ হয়ে যায়। আমাদের সঙ্গে ও খেলা করে, লাফালাফি করে। আমি যদি একটা চকলেট খাই ও অর্ধেক খায়। আমার মনে পড়ে না বাজার থেকে একটা কোল্ড ড্রিংস কিনেছি আর ও খাইনি। অর্ধেক কোল্ড ড্রিংস খেয়ে বাকী অর্ধেক ওর জন্য বাসায় নিয়ে আসি। ও সব সময় আমাদের ভাই বোনের মতো আদর যত্ন পেয়েছে। কোরবানি ঈদে ওকে বিক্রি করে দিলে ও বাড়ি থেকে চলে যাবে আমাদের ভীষণ খারাপ লাগছে। ভীষণ কষ্ট লাগছে।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!