সারা দেশে দৈনিক বিদ্যুতের প্রকৃত ঘাটতি দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি থাকলেও সরকারি তথ্যে দেখানো হচ্ছে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি বিদ্যুতের পুরোটাই দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে।
তীব্র দাবদাহে দেশজুড়ে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। সম্প্রতি বিদ্যুতের উৎপাদনে রেকর্ড করেছে। এর পরও বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ও ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) দৈনিক প্রতিবেদনে লোডশেডিংয়ের সঠিক তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে দিনের বেলা বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহে দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু সরকারি এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দৈনিক প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ লোডশেডিং দেখাচ্ছে এক হাজার মেগাওয়াটের মতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপিডিবির সদস্য (বিতরণ) মো. রেজাউল করিম গতকাল বলেন, ‘অনুমাননির্ভর বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি করে তা প্রকাশ করা হচ্ছে। সঠিক চাহিদা নিরূপণের কাজ করা হচ্ছে। এতে খুব শিগগির বিদ্যুতের সঠিক চাহিদা ও লোডশেডিংয়ের সঠিক চিত্র প্রকাশ করা হবে।
পিজিসিবি ও এনএলডিসির দৈনিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গতকাল শনিবার বিকেল ৩টার সময় এক হাজার ১৯৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং দেখানো হয়। এ সময় দেশে বিদ্যুতের চাহিদা দেখানো হয় ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট, বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৩ হাজার ৯৪৯ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এই প্রতিষ্ঠানের বিতরণ এলাকায় বর্তমানে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। আরইবির জোনভিত্তিক লোডশেডিং তথ্যে দেখা গেছে, গতকাল বিকেল ৩টার দিকে এই বিতরণ কম্পানিকে এক হাজার ৮৮১ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে।
এই সময় আরইবির সারা দেশে চাহিদা ছিল আট হাজার ৯১৩ মেগাওয়াট, সরবরাহ করেছে সাত হাজার ৩২ মেগাওয়াট। গতকাল আরইবির ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর জোনের মধ্যে সবেচেয়ে বেশি ঘাটতি ছিল ময়মনসিংহ জোনে। বিদ্যুৎ ঘাটতির ৩৮ শতাংশই ময়মনসিংহ অঞ্চলে ছিল।
গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং চিত্র
প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে ময়মনসিংহের গ্রামাঞ্চলগুলোতে। দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না। ভাপসা গরম ও অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে গ্রামাঞ্চলের মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। স্থবির হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। ময়মনসিংহের শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে বিপিডিবি এবং গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। শহরাঞ্চলে লোডশেডিং তেমন না থাকলেও আরইবির বিতরণ এলাকায় অতিমাত্রায় লোডশেডিং হচ্ছে। ময়মনসিংহের গৌরীপুর, মুক্তাগাছা, ত্রিশাল উপজেলা এবং জামালপুরের মেলান্দহ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রামাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।
গত শুক্রবার এবং গতকাল শনিবার ছুটির দিনেও ময়মনসিংহ ও জামালপুরের গ্রামাঞ্চলের মানুষজন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পায়নি। অথচ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সাধারণ সময়ের তুলনায় বিদ্যুতের চাহিদা থাকে অনেকটাই কম।
আরইবির বিতরণ এলাকায় অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের বিষয়ে বিপিডিবির সদস্য (বিতরণ) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমিয়ে আনতে কাজ করছি। এরই মধ্যে আরইবিকে আগের চেয়ে ৫০ মেগাওয়াট বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ অঞ্চলে স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র কম থাকায় অন্যান্য এলাকার তুলনায় লোডশেডিং বেশি। এ মুহূর্তে অন্য এলাকা থেকে বাড়তি বিদ্যুৎ ময়মনসিংহের গ্রিডে সরবরাহ করার সক্ষমতা পিজিসিবির নেই। তবে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং হলেও ময়মনসিংহের শহরাঞ্চলে হাসপাতালসহ বিভিন্ন জরুরি কার্যক্রম সচল রাখতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গাজীপুরের শ্রীপুরে আগামী মাসে ১৫০ মেগাওয়াটের একটি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হচ্ছে এবং শম্ভুগঞ্জে ৪০০ মেগাওয়াটের আরেকটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। এগুলো চালু হলে ময়মনসিংহ অঞ্চলে লোডশেডিং অনেকটা কমে যাবে।’
খুলনা গেজেট/এইচ