সাংসদ পদ ফিরে পেলেন রাহুল গান্ধী। শুক্রবারই সুপ্রিম কোর্টের তরফে তাঁর শাস্তি স্থগিত করা হয়েছিল। তার ৪৮ ঘণ্টা পরেই রাহুলকে তাঁর সাংসদ পদ ফিরিয়ে দিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। স্পিকারের সচিবালয় থেকে সোমবার সকালে ওই বিষয়ে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এর ফলে মঙ্গলবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে যে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চলেছেন বিরোধীরা, সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারবেন রাহুল। যোগ দিতে পারবেন ওই সংক্রান্ত বিতর্কেও।
কেরলের ওয়েনাড়ের সাংসদ রাহুলকে মোদী পদবি অবমাননা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেছিল সুরাতের আদালত। তাঁকে দু’বছরের কারাদণ্ডও দিয়েছিলেন সুরাত আদালতের বিচারক। যিনি এক সময়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আইনজীবীও ছিলেন। ওই শাস্তির জন্যই রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায়। এমনকি, রাহুলের আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভোটে দাঁড়ানো নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কিন্তু শুক্রবার সুরাত আদালতের দেওয়া সেই শাস্তির নির্দেশে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের ওই সিদ্ধান্তের পরই রাহুলের সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার রাস্তা সুগম হয়।
শুক্রবারের সুপ্রিম স্থগিতাদেশের পরই রাহুলকে তাঁর সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লোকসভায় আর্জি পেশ করে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল বলেন, ‘‘আমরা আশা করব স্পিকার যেমন দ্রুততার সঙ্গে রাহুলজির পদ খারিজ করেছিলেন, তেমনই সক্রিয়তা দেখা যাবে সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও।” লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরীও বলেন, ‘‘রাহুলজিকে সাংসদ পদ ফিরিয়ে দিতেই হবে।’’ শুক্রবারের পর সোমবারই বসে লোকসভার অধিবেশন। সোমবার সকালেই রাহুলের সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে লোকসভার স্পিকারের সচিবালয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে মঙ্গলবার বিরোধীরা যখন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবেন, তখন সংসদে উপস্থিত থাকবেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল। সে ক্ষেত্রে মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে বক্তৃতা দিতেও দেখা যেতে পারে তাঁকে।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কর্নাটকে প্রচারে গিয়ে মোদী পদবি নিয়ে মন্তব্যের জন্য গত ২৩ মার্চ রাহুলকে দু’বছরের করাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছিল সুরাত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তারই ভিত্তিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-এর ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৪ মার্চ রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(১) ধারা অনুযায়ী, কোনও অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাংসদ-বিধায়কের দু’বছর বা তার বেশি কারাদণ্ড হলে তৎক্ষণাৎ সাংসদ বা বিধায়ক পদ চলে যায়। রাহুলকে ওই মেয়াদের সাজা দেওয়ার ফলে শুধু সাংসদ পদ হারানো নয়, ছ’বছরের জন্য রাহুলের ভোটে লড়াও নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে সুরাত আদালতের রায় বহাল রেখেছিল সুরাত দায়রা আদালত এবং গুজরাত হাই কোর্টও। কিন্তু শুক্রবারের সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের ফলে ২০২৪ সালে রাহুলের ভোটে লড়ার পথেও বাধা দূর হয়। কারণ জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারা অনুযায়ী সাজার মেয়াদ দু’বছরের চেয়ে এক দিন কম হলেও দোষী জনপ্রতিনিধির পদ খারিজ হবে না। বলবৎ হবে না, ছ’বছর পর্যন্ত ভোটে লড়ার উপরে নিষেধাজ্ঞাও।
খুলনা গেজেট/এনএম