মণিপুরে জাতিগত সংঘাত নিয়ে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব ভালোভাবেই উতরে গিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় মণিপুরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে মোদি বক্তৃতা দেওয়ার পর সরকারদলীয় এমপিদের কণ্ঠভোটে খারিজ হয়ে যায় এই প্রস্তাব।
প্রসঙ্গত, ভারতের জনজাতি অধ্যুষিত রাজ্য মণিপুরে গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় সরকার গাফিলতির পরিচয় দিয়েছে— অভিযোগ তুলে সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনে কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলো।
টানা তিন দিন এই প্রস্তাব নিয়ে বিজেপি ও বিরোধীদলীয় এমপিদের পাল্টাপাল্টি যুক্তিতর্ক শেষে বৃহস্পতিবার এই ইস্যুতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বক্তব্য দেন নরেন্দ্র মোদি।
নিজ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মণিপুরের বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই যে পুরো দেশ তাদের পাশে রয়েছে এবং দ্রুত সেই রাজ্যে শান্তি ফিরে আসবে।’
প্রসঙ্গত, গত ৩ মে মণিপুরের হিন্দু ধর্মাবলম্বী জাতিগোষ্ঠী মেইতিদের সাংবিধানিকভাবে তফসিলি জাতির স্বীকৃতি দিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে পরামর্শ দেন রাজধানী ইম্ফলের হাইকোর্ট। হাইকোর্ট এই সুপারিশ জানানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সংঘাত শুরু হয় মেইতি ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী কুকি-চিন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে।
বিজেপিশাসিত মণিপুরে দাঙ্গা থামাতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর রিজার্ভ ফোর্স পাঠানো ব্যতীত এতদিন দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। গত দুই মাসের দাঙ্গায় অন্তত ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন হাজারেরও বেশি মানুষ। সেই সঙ্গে ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য বাড়িঘর, গির্জা, মন্দির ও সরকারি স্থাপনা, বাড়ি-ঘর ছেড়ে মিজোরাম, আসাম ও নিকটবর্তী অন্যান্য রাজ্যের আশ্রয়শিবিরগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ।
গত ১৯ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, কুকি-চিন জাতিগোষ্ঠীর তিন নারীকে বিবস্ত্র করে হাঁটতে বাধ্য করেছে একদল দাঙ্গাকারী। ওই নারীদের মধ্যে একজন গণধর্ষণেরও শিকার হয়েছিলেন।
এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরদিন, ২০ জুলাই এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রথমবারের মতো মণিপপুর ইস্যুতে মুখ খোলেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু মোদি বক্তব্য দেওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার প্রস্তুতি নিতে থাকে কংগ্রেস ও বিরোধী দলগুলো এবং সোমবার ছিল তার শেষ ধাপ। আনুষ্ঠানিকভাবে সেদিন অনাস্থা প্রস্তাব তোলা হয় মোদি ও তার নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে।