আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে সোমবার আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে পূর্বাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। আর এই বৃষ্টির পানির চাপে দারনা শহরের কাছে নদীর ওপর দেওয়া দুটি বাধ ধসে পড়ে। সেই বাধের পানির কারণেই সেখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাধের পানির কারণে সৃষ্ট বন্যা হাজার হাজার মানুষকে সমুদ্রের দিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সেই বন্যাটিকে অনেকে সুনামির মতো আখ্যায়িত করেছেন।
বিবিসি আরও জানিয়েছে, বন্যার পানির তোড়ে অনেক এলাকাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সমুদ্রের পানিতে যেসব মানুষ ভেসে গেছেন তাদের মরদেহ পানি থেকে উদ্ধার করতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।
বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দারনা শহরের অ্যাম্বুলেন্স সোসাইটি জানিয়েছে, শুধুমাত্র এ শহরটিতেই ২ হাজার ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, এখনো ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ আছেন।
এদিকে ভয়াবহ এই বন্যার পানিতে ডুবে বা ভেসে গিয়ে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে লিবিয়ার স্বঘোষিত পূর্বাঞ্চলের সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে মৃত্যুর এ সংখ্যাটি নিশ্চিত করতে পারেনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিপর্যস্ত দারনা শহরে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, সেখানকার অবস্থা বেশ খারাপ।
ওই পুরো দারনা শহরই বন্যার পানিতে সমুদ্রে ভেসে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
দারনার এক উদ্ধারকারী জানিয়েছেন, সেখানকার হাসপাতালগুলোতে এখন আর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া মর্গগুলোও মৃতদেহে ভরে গেছে।
বিবিসি আরও জানিয়েছে, এই ভয়াবহ বিপদে যারা পড়েছেন তাদের যে উদ্ধার করা হবে সেই পরিস্থিতিও এখন লিবিয়ায় নেই। কারণ ২০১১ সালে সাবেক শাসক কর্নেল মোহাম্মদ গাদ্দাফিকে হত্যার পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখে পড়ে দেশটি। আর তখন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশটিতে শুধুমাত্র যুদ্ধই চলেছে। ফলে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে— বিপর্যয় পরবর্তী বিষয়াবলী যে সামাল দেওয়া হবে এমন কোনো বাহিনী বা অবকাঠামোই তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া গাদ্দাফির পতনের পর গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে যায় লিবিয়া। এর ফলে বর্তমানে দেশটি দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এখন পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল আলাদা আলাদাভাবে শাসিত হয়ে আসছে। আর বিভক্তির কারণে কেন্দ্রীয় ও সমন্বিত কোনো উদ্ধার অভিযানও সম্ভব হচ্ছে না।
সুনামি সদৃশ বন্যা সম্পর্কে পূর্বাঞ্চলের সরকারের এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ‘আমি যা দেখেছি তা দেখে মারাত্মকভাবে চমকে গিয়েছি। এটি সুনামির মতো ছিল।’
তিনি বিবিসিকে বলেছেন, দারনার দক্ষিণাঞ্চলে একটি বাধ ধসে পড়ার পর পুরো শহরটিকে বাধের পানি সমুদ্রে নিয়ে চলে যায়।
এই ভয়াবহ সুনামির মতো বন্যা থেকে বাঁচতে অনেকে উঁচু বাড়ির আশ্রয় নেন। কিন্তু যাদের কঁপাল ভালো ছিল না, তারা ভেসে চলে যান সমুদ্রে। আর সেখানেই তাদের সলিল সমাধি ঘটে।
খুলনা গেজেট/এইচ