খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে : প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

গেজেট ডেস্ক

পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতায় আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সৌদি আরবের মক্কা নগরী থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০ লাখ হাজি। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান।

সৌদি আরবে আজ ৯ জিলহজ, যা পবিত্র ‘আরাফাত দিবস’ হিসেবে পরিচিত। হাজিরা ঐতিহাসিক এই ময়দানে নামাজ, জিকিরসহ ইবাদত বন্দেগি ও দোয়া-মোনাজাতে দিনটি কাটাবেন। এদিন সকাল থেকে লাখো কণ্ঠে সমস্বরে উচ্চারিত হচ্ছে—‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা, ওয়ান্‌নি মাতা লাকা ওয়াল্‌মুল্‌ক্‌, লা শারিকা লাকা’। এর বাংলা অর্থ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার’।

সাদা দুই টুকরা কাপড়ে শরীর ঢেকে হজযাত্রীরা আজ বৃহস্পতিবার মিনায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর থেকেই পবিত্র আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে রওনা করেন। এই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুসলিমরা সমবেত হচ্ছেন এই পবিত্র প্রান্তরে।

গতকাল বুধবার (৪ জুন) সকাল থেকে মিনায় জড়ো হওয়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। অধিকাংশ হাজি মঙ্গলবার রাতেই তাঁবুর শহর মিনায় পৌঁছে যান। হজযাত্রীদের সংখ্যা বিবেচনা করে সৌদি মুয়াল্লিমরা আগের রাত থেকেই তাঁদের মিনায় নেওয়া শুরু করেন।

মিনায় যাত্রার মাধ্যমে হজ পালনের সূচনা হয়, যা ১২ জিলহজ শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। অন্যান্য দেশের হাজিদের সঙ্গে এবার বাংলাদেশের ৮৫ হাজার ১৬৪ জন হাজিও বুধবার সারা দিন মিনার তাঁবুতে অবস্থান করেছেন।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের খবরে বলা হয়, সৌদি আরবের বাইরে থেকে ১৫ লাখের বেশি হজযাত্রীর আগমন নিশ্চিত করছে সৌদি প্রশাসন। হজযাত্রীদের চলাচল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিস্তৃত ট্র্যাফিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় রয়েছে হজযাত্রীদের প্রধান রুটগুলো এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ আচার পালনে সুশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিশ্চিত করা। আকাশ থেকেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নজরদারি করা হচ্ছে।

সৌদিতে তাপমাত্রা প্রায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন হলে সব হজযাত্রীদের কাছাকাছি হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর শরণাপন্ন হতে আহ্বান জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খালিদ আল-তালা বলেন, জরুরি অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা এবং নিবিড় চিকিৎসা কেন্দ্রসহ ৯৮ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এ ছাড়া তিনটি অতিরিক্ত ফিল্ড হাসপাতাল রয়েছে, যেগুলোর সম্মিলিত ধারণক্ষমতা ১ হাজার ২০০ শয্যা। মন্ত্রণালয় ৭১টি জরুরি সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন এবং ৯০০টি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে সহায়তা করার জন্য ১১টি মেডিকেল ইভাকুয়েশন উড়োজাহাজ নিয়োজিত করা হয়েছে।

মুখপাত্র খালিদ আল-তালা আরও বলেন, ৫০ হাজারের বেশি চিকিৎসা ও কারিগরি কর্মী হজযাত্রীদের সেবায় নিযুক্ত রয়েছে।

আজ সারা দিন হাজিরা পবিত্র আরাফাতের ময়দানে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত চেয়ে প্রার্থনা করবেন। এ ময়দানে অবস্থানকালে হজযাত্রীরা নামিরাহ মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় করবেন। বিশ্বের লাখ লাখ হজযাত্রী সম্মিলিতভাবে আল্লাহর উপাসনায় নিজেদের নিমগ্ন রাখবেন। আজ সন্ধ্যায় হজযাত্রীরা মুজদালিফায় যাত্রা শুরু করবেন। এটি আরাফাত ও মিনার মধ্যে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। হজযাত্রীরা মুজদালিফায় রাত কাটাবেন এবং ছোট পাথর সংগ্রহ করবেন। মিনায় জামারাত স্তম্ভে শয়তানকে লক্ষ্য করে এসব পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা।

আগামীকাল শুক্রবার (১০ জিলহজ) ভোরে ফজরের নামাজ শেষ করে আবার মিনায় ফিরে আসবেন হজযাত্রীরা। সেখানে জামারাত আল-আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করার পর পশু কোরবানি করবেন তারা। এরপর তাওয়াফ আল-ইফাদাহ বা ফরজ তাওয়াফ করার জন্য মসজিদুল হারামে যাবেন। এই তাওয়াফ অবশ্য ১০ থেকে ১২ জিলহজের মধ্যে যেকোনো সময় করতে পারবেন তারা। এ সময় তারা কাবা শরিফ তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সাঈ করবেন এবং মাথা মুণ্ডন করবেন। একবার এই পবিত্র কাজটি সম্পন্ন করার পর হজযাত্রীদের আর ইহরামের নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে হবে না। তারা সব হালাল (অনুমতিযোগ্য) কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত হতে পারবেন।

হজের অবশিষ্ট আচারগুলো সম্পন্ন করতে হজযাত্রীদের অবশ্যই আবার মিনায় ফিরে যেতে হবে। তাশরিকের দিনগুলোতে ১১, ১২ ও ১৩ জিলহজ হজযাত্রীদের মিনায় আরও দুটি কাজ করতে হবে। ১১ জিলহজ বিকেলে হজযাত্রীরা ২১টি ছোট পাথর সংগ্রহ করে তিন জামারাতে নিক্ষেপ করবেন। পাথর নিক্ষেপ শুরু হয় জামারাত আল-উলা দিয়ে, তারপর জামারাত আল-উস্তা এবং পরে জামারাত আল-আকাবা দিয়ে শেষ হয়।

মক্কা থেকে যাত্রা করার আগে হজযাত্রীদের তাওয়াফ আল-বিদা করতে হবে, যা বিদায়ী তাওয়াফ নামেও পরিচিত। এটি হজ সম্পন্ন করায় অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে এবং সব হজযাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫ লাখ হজযাত্রীসহ প্রায় ২০ লাখ মানুষ আজ বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের মক্কা নগরীর পবিত্র আরাফাত ময়দানে সমবেত হয়েছেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!