খুলনা, বাংলাদেশ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
  নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে টেক্সটাইল মিলে গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দুজনের মৃত্যু

লাঞ্ছনার সা‌থে জড়িতদের বিচার দাবিতে কুয়েটে শিক্ষক স‌মি‌তির আল্টিমেটাম (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িতদের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে ৭ কার্যদিবসের আল্টিমেটাম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। সোমবার (৫ মে) দুপুরে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব দাবি জানান সমিতির নেতারা।

প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, আজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ৫ দফা দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে শিক্ষকবৃন্দ সকল প্রকার প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকবে।

তিনি বলেন, গত ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপদেষ্টা এবং ইউজিসি প্রতিনিধি দল যে পক্ষপাতিত্বমূলক ভূমিকা পালন করেছেন তাতে শিক্ষকবৃন্দ উপেক্ষিত হয়েছে। শিক্ষকবৃন্দ এতে মর্মাহত হয়েছে এবং নিন্দা জানাচ্ছে। গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ব্যক্তিসহ শিক্ষকবৃন্দকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত সবাইকে চিহ্নিত করে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করে শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরার পরিবেশ তৈরি একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় শিক্ষকবৃন্দ প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে। শিক্ষকদের সাইবার বুলিং, অবমাননা বা গুজবের সাথে জড়িত দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের ৫ দফার সাথে একাত্মতা পোষণ করে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুয়েট বিরোধী অপপ্রচারে লিপ্তদের শণাক্তপূর্বক সেগুলো বন্ধ এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এই পরিবেশ নিশ্চিত করা না হলে শিক্ষকবৃন্দ সকল প্রকার প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকবে।

এদিকে বিকাল ৩টায় শিক্ষার্থীরা ক্ষমা চেয়ে ভিসি’র মাধ্যমে শিক্ষকদের নিকট স্মারক লিপি প্রদান করেছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত হামলার ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত ভিসি স্যারকে জানিয়েছি। আমা১ের ৫ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। দ্রুত ক্লাসে ফিরতে পারি সেই পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে বলা হয়েছে। শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে লিখিত দিয়েছি। তারা ক্ষমা না করা পর্যন্ত আমরা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।

সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. হযরত আলী। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয়ে কুয়েট অডিটোরিয়ামে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে সভা।

উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ হযরত আলী বলেন, ক্লান্তিকাল সময় সরকারের নির্দেশে আমি কুয়েটে এসেছি এবং অলরেডি যোগদান করেছি। এরপর থেকে সিরিজ মিটিং, বিভিন্ন স্টিক হোল্ডারদের সাথে মিটিং করেছি। এবং কি পরিমান করেছি যে, গতকাল মিনিমাম পাঁচটা মিটিং করেছি। লাস্টে ছাত্রদের সাথে কিছুটা আলাপ হয়েছে, সেটা ধরলে ছয়টা। উদ্দেশ্য একটাই যে, আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম কিভাবে দ্রুত চালু করা যায়! এটাই এখন প্রধান উদ্দেশ্য। কারণ এই কুয়েট দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ অবস্থায় আছে।

তিনি বলেন, কুয়েটে যে ঘটনা ঘটেছে, সেটা শুধু কুয়েটে সীমাবদ্ধ ছিলনা, পুরো ন্যাশন ওয়ার্ল্ডে ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। এমনকি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ ছাত্রীরা, আমি চুয়েটে ছিলাম ছাত্র/ছাত্রীরা এখানে অনশনে বসে ছিল। এখন কয়েক দিনের আলোচনায় আমি যেটা বুঝতে পারলাম ঘটনা অনেক সিরিয়াস। ছাত্র-ছাত্রীদের বলতে দেওয়ার আগে আমি সূচনায় বলতে চাই, ছাত্র-ছাত্রীদের আজকের সবকিছু বিবেচনা করে আসলে ইউনিভার্সিটি কত তাড়াতাড়ি খুলবে ডিপেন্ড করবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা যে প্রেস রিলিজ দিয়েছো তা মাথায় রাখবে। তোমরা যে শিক্ষকদের কাছে গিয়ে বিভিন্ন সময় ক্ষমা চেয়েছো, সেটা আমি শিক্ষকদের কাছ থেকে শুনেছি, সেটাই মাথায় রাখবে। তোমাদের বক্তব্য পেপারেও আসছে যে, প্রকৃত যারা দোষী তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক। এ বিষয়টিও মাথায় রাখবে।

তিনি বলেন, একদিকে তোমরা এজাতীয় কথা বলতেছো অন্যদিকে তোমরা সাইবার বুলিং চালিয়ে যাচ্ছো, নামে বেনামে, সেটা তোমরা হোক, তোমাদের ভাই হোক, যেই হোক, এটা কিন্তু হচ্ছে। টিচাররা কন্টিনিউয়াসলি একটা বড় পীড়ার ভিতর আছে, আতঙ্কে আছে। এই ব্যাপারগুলো কিভাবে মিনিমাইজ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাব এই জাতীয় সুচিন্তিত মতামত তোমরা দিবে এবং সেটা ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট। আমি মতামত পেলে সকল শিক্ষকদের কাছে সেটা নিয়ে গিয়ে তোমাদের পক্ষে নিজেই শিক্ষকদের মোটিভেট করার চেষ্টা করব, আপ্রাণ চেষ্টা করব।

উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি কুয়েট বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে কুয়েটে অচলাবস্থার সৃষ্টি। এরপর শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন ও আমরণ অনশনের প্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। ১ মে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. মো. হযরত আলীকে নিয়োগ দেয়া হয়। এরআগে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু কথা থাকলেও একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরেননি শিক্ষকরা। ছাত্রদের হাতে শিক্ষক লাঞ্চিতের বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না তারা।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!