খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ ভাদ্র, ১৪৩১ | ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরো তিনজনের মৃত্যু হয়েছে
  চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ডে জাহাজ কাটার সময় বিস্ফোরণ, দগ্ধ ১২
  নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে সব তৈরি পোশাক কারখানা, কাজে ফিরেছেন পোশাক শ্রমিকরা; শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার

লাখ কোটি টাকা ছাড়াল সরকারের ব্যাংক ঋণ

গেজেট ডেস্ক

সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৭৩৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কমে যাওয়ায় গত অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। সরকার এমন একসময়ে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়েছে, যখন অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

দেশে দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতাও কমেছে। এসব কারণে গত মে পর্যন্ত এক বছরে ব্যাংক খাতের আমানত বেড়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আবার গত অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে ১২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ঢুকেছে। এসবের প্রভাবে অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৭ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা ধার নিয়েছে। একই দিন আন্তঃব্যাংক কলমানিতে ধারের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। সর্বোচ্চ ১২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ সুদহার উঠেছে ১৪ দিন মেয়াদি ধারে। আর ট্রেজারি বিলে এখন ১১ দশমিক ৮০ এবং ট্রেজারি বন্ডে ১২ দশমিক ৩১ শতাংশ সুদে সরকার ঋণ নিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের ঋণ চাহিদার কারণে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সুদহার অনেক বেড়েছে। এমনিতেই ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় আমানতে গতি কম। এর মধ্যে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বেশি সুদ পাওয়ায় ব্যাংক, করপোরেট হাউস এবং ব্যক্তি সেখানে চলে যাচ্ছে। সঞ্চয়পত্রও সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না। এটা ভালো লক্ষণ নয়। কেননা, ব্যাংকের হাতে টাকা না থাকলে বেসরকারি খাত বাধাগ্রস্ত হবে। ব্যবসা ও বিনিয়োগ কমে কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলবে। আবার সরকারের ঋণ বৃদ্ধি সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্যে সমস্যা তৈরি করবে।

প্রসঙ্গত, দেশি-বিদেশি উৎসে দ্রুত সরকারের ঋণ বৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছর সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে সুদ পরিশোধে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও সংশোধিত বাজেটে বাড়িয়ে ১ লাখ ৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। মূলত বিভিন্ন উৎসে এখন সরকারের ঋণ রয়েছে ১৮ লাখ কোটি টাকার মতো। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬০ কোটি টাকার মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকে রয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে ১ লাখ ৫১ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। আর সঞ্চয়পত্রে গত মে পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে।

গত মার্চ পর্যন্ত বিদেশি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার, যা প্রায় ৯ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা।

গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সমকালকে বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণ বৃদ্ধির ফলে একদিকে ব্যক্তি খাতের ঋণ সংকুচিত হবে। ঋণ পাওয়া আরও কঠিন হবে। আরেক দিকে সরকারের সুদ ব্যয় বেড়ে সামষ্টিক অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে। এমনিতেই এখন কর-জিডিপি অনুপাত অনেক কম। এর মধ্যে সুদ ব্যয় অনেক বেড়ে যাওয়া ভালো খবর নয়।

চলতি অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে এবার ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত অর্থবছর ১৮ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৭ হাজার ৩১০ কোটি টাকা করা হয়। যদিও জুলাই-মে পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ উল্টো কমেছে ১৭ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা।

 

 

খুলনা গেজেট/এইচ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!