খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আজারবাইজানে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

লাখো কন্ঠের আমিন ধ্বনিতে শেষ হলো চরমোনাই মাহফিল 

গেজেট ডেস্ক 

প্রায় অর্ধকোটি ধর্মপ্রান মুসলমানদের সম্মিলিত আমিন ধ্বনিতে শেষ হলো ২০২১ সালের ঐতিহাসিক চরমোনাই ফাল্গুনের মাহফিল। কান্নাজড়িত কন্ঠে শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল পোনে ৯ টায় আখেরি মুনাজাত হয়।
আখেরি মুনাজাতে দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তি কামনা করে দোয়া করেছেন আমিরুল মুজাহিদীন মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।
বিদায়ি বয়ানে মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম সবাইকে দীনের পথে চলতে এবং আল্লাহ তায়ালার পরিচয় পেতে নিজেদের জীবনের আমলে ইসলামের প্রতিটি শাখা ভালোভাবে গ্রহণ করার আহবান জানিয়েছেন। তিনি চরমোনাইর মুরিদদেরকে কোন ধরণের অন্যায় কাজে না জড়ানোর জোর অনুরোধও করেছেন। ময়দানে হু হু কান্নার রব উঠেছে যখন তিনি বলেছেন – “তিনদিন ধরে আমরা এ ময়দানে ছিলাম, অনেকেই অনেক কষ্ট করেছেন। জানি না আবার আগামী বছর এ ময়দানে আর দেখা হয় কি না”। তিনি বিদায়ী বয়ানে চরমোনাইর মরহুম পীর সাহেব সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. এর জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন এবং সবার জীবনে ইসলামকে পূর্ণাঙ্গরুপে মেনে চলার আহবান করেছেন।
শনিবার ফজরের নামাজের পর থেকেই চরমোনাইর এ বিশাল বিশাল পাঁচটি ময়দানে যেন বিদায়ের সূর বেজে উঠেছিলো। কান্নাজড়িত কন্ঠে বিদায়ী মুনাজাত করে ময়দান ছেড়েছেন লাখো মুসুল্লিরা।
ফজরের নামাজের পর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের তেলাওয়াতের মাধ্যমে মাহফিলের শেষ অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীম ধারাবাহিক বয়ানের অংশ হিসেবে বা’দ ফজরের বয়ান করেন। তারপর আখেরী মুনাজাতের বয়ান করে দীর্ঘক্ষণ আল্লাহ তায়ালার দরবারে মুনাজাত করে মাহফিলের কার্যক্রম সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সারাদেশ থেকে আগত লাখো সংখ্যার এই মুসুল্লিরা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ তাসাউফ ও আধ্মাতিকতার সবক গ্রহণ করতে প্রতি বছর বাংলা মাসের হিসেবে অগ্রহায়ন ও ফাল্গুন মাসে চরমোনাই ময়দানে উপস্থিত হয়ে থাকেন। এর মধ্যে ফাল্গুনের মাহফিলটি ব্যাপক পরিসরে হয়ে থাকে। তিনদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের উপস্থিতিতে তারা দীক্ষা নেন ইসলামের বিভিন্ন অনুসঙ্গের।
তিন দিনব্যাপী এ মাহফিলে আমিরুল মুজাহিদীন চরমোনাইর পীর মুফতী সৈয়দ রেজাউল করীমের উদ্বোধনী ও আখেরী বয়ানসহ মোট পাঁচটি বয়ান ও নায়েবে আমিরুল মুজাহিদীনের জুমার বয়ানসহ মোট তিনটি বয়ান হয়েছে। প্রায় দেড় ঘন্টাব্যাপী প্রতিটি বয়ানে মানুষকে আল্লাহ তায়ালার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া এবং জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ইসলামের প্রতিটি শাখা-প্রশাখা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে জুমার বয়ানে মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম সূরা ফাতেহার তফসির নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।
এছাড়াও সারাদেশ থেকে আগত দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরামদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বয়ানসহ প্রতিদিনই ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদরাসার শায়খুল হাদিস ও মুহতামিম পর্যায়ের আলেমরা এ মঞ্চে বয়ান করে থাকেন। এ বছর বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় ওয়ায়েজ মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী।
এর মধ্যে মাহফিলের দ্বিতীয় দিনের বিশেষ আকর্ষণ ছিলো ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনটি। এ সম্মেলনে দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরামদের ঢল নেমেছিলো। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীসহ আরও যারা যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের কয়েকজন হলেন আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী, মহাসচিব হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। রামপুরার আল্লামা ইয়াহইয়া মাহমুদ, হাফেজ ক্বারী আব্দুল হক সাহেব, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাহেব, মুফতি মোবারকুল্লাহ সাহেব মুহতামিম, জামেয়া ইউনুসিয়া, বি বাড়িয়া। মুফতি আবু সাঈদ, শাইখুল হাদিস, জামিয়া সিরাজিয়া,বি-বাড়িয়া। মাওলানা মাহবুবে এলাহি, মুহতামিম উজানী মাদরাসা। মাওলানা খাজা আহমাদুল্লাহ, শাইখুল হাদিস ও মুহতামিম, জাফরাবাদ মাদ্রাসা,চাঁদপুর। মুফতি সাইফুল ইসলাম, মুহতামিম, বড় কাটারা মাদ্রাসা, জামাতায়ে মুফতি আমিনী রঃ।  মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, চেয়ারম্যান ইসলামী ঐক্যজোট।
আরও উপস্থিত ছিলেন – ডক্টর হুমাউন কবির খালিদ। মাওলানা খোবাইব বিন তৈয়ব, মুহতামিম জিরি মাদরাসা। ডক্টর আফম খালিদ হোসাইন। আল্লামা মুহাম্মাদ কাসিম শাইখুল হাদিস, নাজিরহাট বড় মাদ্রসা। মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মহাপরিচালক শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্স সেন্টার। মুফতি সাদেক আহমেদ সিদ্দিকি, খতিব, মালিবাগ শহিদী মসজিদ।
আরও ছিলেন – মুফতি রেজাউল হক আব্দুল্লাহ, মুহতামিম, জামেয়া দারুল উলুম, মিরপুর। হাফেজ মাওলানা ফারুক আহমাদ, মুহতামিম, জামিয়া ইসলামীয়া লালমাটিয়া। মুফতি মহিবুল্লাহ আল বাকী আন নদভী, পেশ ইমাম বায়তুল মোকাররম। মুফতি সাদেক আহমাদ, প্রধান মুফতি, জামেয়া মাদানিয়া, যাত্রাবাড়ী। মাওলানা আনোয়ার শাহ। শাইখুল হাদিস, হাসনাবাদ মাদ্রাসা, ঢাকা। মুফতি ওমর ফারুক, শাইখুল হাদিস, মতিঝিল ওয়াবদা মাদ্রাসা। মাওলানা মজিবুর রহমান, তেজগাঁও রেলওয়ে মাদ্রাসা। মাওলানা আব্দুল আখির শাইখুল হাদিস, মারকাজুল উলুম, মান্ডা। মুফতি গোলামুর রহমান, মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস, এমদাদুল উলুম রশিদিয়া, খুলনা। মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, মুহাতামিম, মাহমুদিয়া মাদরাসা। মুফতি উসামা আমীন, মুহাদ্দিস, গওহারডাঙ্গা মাদ্রাসা, সদর সাহেব হুজুরের নাতি। মাওলানা জাফর আহমাদ কাসেমী, জামালপুর।
এছাড়াও শত শত আলেমরা এ বছর চরমোনাই মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।
চরমোনাই বাৎসরিক ফাল্গুনের মাহফিলে বিগত যে কোন সময়ের চেয়ে এবছর মানুষের সমাগম অনেক বেশি হয়েছে। প্রায় পাঁচটি মাঠে ৩০০ একর জায়গাজুড়ে মানুষের উপস্থিতি হয়েছে। মাহফিল শুরু হওয়ার দুদিন আগেই প্রায় পাঁচটি মাঠে মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
মাহফিল কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গেছে  এ বছর প্রস্তুত হওয়া পাঁচটি মাঠের আয়তন প্রায় ৩০০ একর জায়গা। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিলো মুসুল্লিরা। দোকানপাট, রাস্তাঘাট বাদ দিলে প্রায় আড়াইশ একর জায়গায় ষাট হাজার খুটির মাধ্যমে মুসুল্লিদের জন্য সামিয়ানা প্রস্তুত করা হয়েছে।
মাহফিলে শ্রোতাদের জন্য এ বছর প্রায় চার হাজার মাইক বসানোর ব্যবস্থাও হয়েছে।
বাংলাদেশে সর্ববৃহত গণজমায়েত হিসেবে চরমোনাই ফাল্গুনের মাহফিলকে অনেকে বিবেচনা করে থাকেন। বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির ব্যবস্থাপনায় চরমোনাই মাদরাসা ময়দানসহ ৫ টি মাঠে এ মাহফিলটি অনুষ্ঠিত হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারী (বুধবার) জোহরের পরে চরমোনাইর বর্তমান পীর সাহেব সৈয়দ রেজাউল করীমের উদ্বোধনী বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয়ে ২৭ তারিখ শনিবার আখেরী মুনাজাতের মাধ্যমে এ বছরের মাহফিল কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!