বাগেরহাটের চিতলমারীতে ঋণের টাকা আদায়ের জন্য পরিতোষ মন্ডল (৫১) নামের এক মৎস্য চাষিকে ৮ ঘন্টা আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে ছেলে দেব মন্ডল (২২) বাবাকে ছাড়াতে এলে মৎস্য অফিসের লোকজন তার ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলটি আটকে রেখেছে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় লকডাউনের মধ্যে এমন ঘটনাটি ঘটেছে চিতলমারী উপজেলা মৎস্য অফিসে। ঘটনার পর থেকে মৎস্য চাষি পরিতোষ মন্ডল ও তার ছেলে দেব মন্ডল মোটর সাইকেলটি ফেরত পাওয়ার আশায় দ্বারেদ্বারে ঘুরছেন।
শুক্রবার (২৫ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় মৎস্য চাষি পরিতোষ মন্ডল কান্নাজড়িতকণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, ঘেরে মাছ চাষের জন্য চিতলমারী মৎস্য অফিস থেকে ৬৬ হাজার টাকা লোন নিয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য সময় মত ওই টাকা দিতে পারিনি। এ জন্য আমি মৎস্য অফিসের কাছে সময় প্রার্থনা করেছি। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে করোনার বিশেষ লোন দেয়ার কথা বলে আমাকে মৎস্য অফিসে ডেকে নেয়। পরে সেখানে গেলে মৎস্য অফিসারসহ অফিসের লোকজন আমার উপর অগ্নিমুর্তি ধারণ করে ৮ ঘন্টা আটকে রাখে। এ সময় তারা বলেন ১০ হাজার টাকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেবে। খবর পেয়ে আমার ছেলে চড়া সুদে ১০ হাজার টাকা নিয়ে আমাকে ছাড়াতে এলে তারা তার ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলটি আটক করে রেখেছে।
পরিতোষ মন্ডলের ছেলে দেব মন্ডল বলেন, ‘আমি স্ত্রী, সন্তান নিয়ে বাবার সংসার থেকে আলাদা খাই। অনেক কষ্টে কিস্তিতে মোটরসাইকেলটি কিনেছি। ওটার আয় দিয়েই আমার সংসার চলে। মোটর সাইকেল চালাতে না পারলে শিশুকন্যাসহ আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। অন্যদিকে কিস্তির বোঝা বাড়বে।’
এ ব্যাপারে চিতলমারী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান রিগান বলেন, পরিতোষ মন্ডল ১২ বছর আগে বিনা সুদে ৬৬ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে। অদ্যবধি কোন টাকা পরিশোধ করেনি। তাই লোভ দিয়ে ফাঁদ পেতে তাকে অফিসে ডেকে আনি। তার ছেলে ৫ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছাড়াতে এলে তার মোটর সাইকেল আটক করা হয়। পরে আটক পরিতোষকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলোচনায় বসেন। আলোচনার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ঋণের সব টাকা পরিশোধ করে পরিতোষ তার ছেলে মোটরসাইকেল ছাড়িয়ে নিবেন।
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ লিটন আলী মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি মধ্যস্থতার জন্য সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।
চিতলমারী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ নিজাম উদ্দিন শেখ বলেন, বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার মৎস্য কর্মকর্তাকে ফোন দিয়েছি। বিষয়টি মীমাংসা চেষ্টা চলছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই