খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

লকডাউনেই সমাধান নয়, জনসচেতনতা জরুরি

মামুন অর রশিদ

বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহরূপ ধারণ করছে। প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই নিবন্ধ যখন লিখছি, এদিন দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ৩৪৩ জন এবং গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৭ জন। এটিই এখন পর্যন্ত দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। যা গতকাল ছিল ৬৩ জন ও পরশু ৭৪। আর এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন নয় হাজার ৬৬১ জন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জন।

লাফিয়ে লাফিয়ে যেমন বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা, তেমনি মৃত্যুর হারও বাড়ছে। মার্চের শুরু থেকেই দেশে পুনরায় করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে তা দ্রুত গতিতে বেড়েছে। গত ২৬ মার্চ শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আর ৩১ মার্চ সেটি গিয়ে দাড়াঁয় ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। আবার ১ এপ্রিল ছিল ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, আর গতকাল ৯ এপ্রিল সেটি ২৩ দশমিক ৫৭ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায় (সূত্র: দ্যা ডেইলি স্টার, ১০ এপ্রিল ২০২১)।

কিন্তু দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অপ্রতুলতার কারণে রোগীর চাপ সামলানো যাচ্ছে না হাসপাতাল গুলোতে। ঢাকা শহর ছাড়া বাইরের বিভাগীয় শহরগুলোর অবস্থা আরো করুণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে সারাদেশে মোট আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৬০০। এরমধ্যে ঢাকাতেই আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩০৫টি। এমন পরিস্থিতিতে সরকার আবারো দেশব্যাপী এক সপ্তাহের লকডাউনের ঘোষণা দেয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মানুষজন লোকডাউনকে অতটা গুরুত্ব না দিয়ে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বাহির হচ্ছে। প্রথম এ দফায় লকডাউনে কিছুটা ছাড় পরিলক্ষিত হয়েছে, যেখানে দুরপাল্লার সবধরনের গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরি খোলা ছিল। অন্যদিকে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে একুশে বইমেলাও চালু রাখা হয়েছিল। ফলে প্রথম এদফার লকডাউন তেমন একটা ফলপ্রসূ না হওয়ায় সরকার দ্বিতীয় দফার লকডাউন ঘোষণা করেছে।

দ্বিতীয় দফার লকডাউন আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এবারের লকডাউনে প্রথম দফার চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম। সরকার লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, যেখানে সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম দফার লকডাউনে জরুরি ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান সীমিত পরিসরে খোলা রেখে বাকি শপিংমলসহ সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ ঘোষণা করার পরপরই দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলের দেয়ার জন্য আন্দোলন করেন। পরে সরকারিভাবে সব বিভাগীয় শহরে গণপরিবহন চালুর অনুমতি এবং শপিংমলও খুলে দেয়া হয়। ফলে করোনার সংক্রমণ আরো বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার তাই আবারো ৭ দিনের কঠোর লোকডাউন ঘোষণা করেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, শুধু লকডাউনই করোনা ভাইরাস মোকবেলার জন্য যথেষ্ঠ নয়। এর জন্য দরকার ব্যক্তি সচেতনতা, জনসচেতনতা। যেহেতু স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তাই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়া। বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরিধান করা। গণজমায়েত এড়িয়ে চলা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকল ধরনের প্রয়োজন মেটানো। এছাড়া বাইরে থেকে ঘরে প্রবেশ করেলই অবশ্যই বিশ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি দিয়ে হাতা ধৌত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সবকিছু সরকারের উপর দায় চাপিয়ে নিজেদেরকে সাধু ভেবে রাখলে চলবে না। জনসচেতনতা, ব্যক্তিসচেতনতাই পারে করোনাকে রুখে দিতে। আসুন সবাই মিলে করোনা প্রতিরোধে ব্যক্তিসচেতনতা গড়ে তুলি।

(লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!