কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালীতে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত দুই শিশুসহ সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ডের সময় হুড়োহুড়িতে আহত হয়েছে অন্তত এক হাজার রোহিঙ্গা। কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন আজ মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে আগুনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১০ হাজারের বেশি বসতঘর পুড়ে গেছে। ফলে গৃহহীন হয়ে পড়েছে অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা জানান, সোমবার বিকেল ৪টার দিকে উখিয়ার বালুখালী আট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পাশের অন্য ক্যাম্পগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার আগেই আগুন একে একে আট নম্বর, ওয়েস্ট আট, নয়, ১০ ও সর্বশেষ ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কক্সবাজার, উখিয়া, রামু ও টেকনাফ থেকে সাতটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এ সময় সেনাবাহিনী, পুলিশ, এপিবিএনের সদস্য, রেডক্রিসেন্টের টিম ও স্থানীয় গ্রামবাসী যোগ দেন। পরে গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
শামসুদ দৌজা আরও জানান, আগুনে রোহিঙ্গাদের ১০ হাজারে বেশি ঘর পুড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হলেও এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এ ছাড়া, পুড়ে গেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও অফিস ও পুলিশ ব্যারাক।
অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্প লাগোয়া বাংলাদেশি বাসিন্দাদের দুই শতাধিক বাড়িঘর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহমদ নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের ৪০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা এখন অনেকটা গৃহহীন। একইভাবে দুই শতাধিক বাংলাদেশি পরিবারের বসতবাড়ি পুড়ে গেছে।
উখিয়ার বালুখালী আট নম্বর এপিবিএনের অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো. শিহাব কায়ছার জানিয়েছেন, ‘আগুনে বালুখালীতে অবস্থানরত চার নম্বর এপিবিএনের ব্যারাক আংশিক পুড়ে গেছে। তবে অস্ত্র ও মূল্যবান আসবাবপত্র নিরাপদে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আগুনে রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর ছাড়াও বেশকিছু এনজিও অফিস, স্কুল-মাদ্রাসা পুড়ে গেছে।’
জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা আইওএমের নেতৃত্বাধীন ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ তাফহিম বলেন, ‘কুতুপালং বালুখালী এলাকার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সরকারি ও মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো একসঙ্গে কাজ করেছে। কিন্তু এখনই সামগ্রিক ক্ষয়ক্ষতির উপর বিস্তারিত তথ্য দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি এর তীব্রতা অনেক। হতাহতের এবং ক্ষয়ক্ষতির খবর যাচাই করা হচ্ছে।’
সৈয়দ মোহাম্মদ তাফহিম জানান, ক্যাম্পভিত্তিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তৈরি একটি শিটের হিসাব অনুযায়ী বালুখালীর ৮-ই ক্যাম্পে ঘরের সংখ্যা ছয় হাজার ২৫০, আর লোক সংখ্যা ২৯ হাজার ৪৭২ জন, ৮-ডব্লিউ ক্যাম্পে বাড়ি ছয় হাজার ৬১৩টি, আর লোক সংখ্যা ৩০ হাজার ৭৪৩ জন, ক্যাম্প ৯-এ ক্যাম্পে বাড়ি সাত হাজার ২০০টি, লোকসংখ্যা ৩২ হাজার ৯৬৩ জন এবং ১০-এ ক্যাম্পে বাড়ি ছয় হাজার ৩২০টি, আর লোকসংখ্যা ২৯ হাজার ৭০৯ জন।
আইএসসিজির এই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, অগ্নিকাণ্ডে এই চারটি ক্যাম্পের অধিকাংশ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড।
উখিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত নিয়ে এখনো তেমন বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে গিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে জানতে চাইলে তারাও নানা তথ্য দিয়ে আসছে। এমনকি রোহিঙ্গারাই একে-অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে আসছে। তদন্ত শেষে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
এদিকে, দীর্ঘ সাত ঘণ্টার অগ্নিকাণ্ডে হাজার হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয়স্থল হারিয়ে এক কাপড়ে আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে। আশ্রয়হারা লোকজন হারিয়েছে তাদের ক্যাম্পের ঝুপড়ি ঘরের সব মালামাল। আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় গ্রামবাসীর বসতভিটায় আশ্রয় নিয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা।
খুলনা গেজেট/এনএম