মানুষের উপর মহান আল্লাহর অপার কৃপার অন্যতম হল, তার নেক কাজের প্রতিদান বৃদ্ধি করে দেন এবং পাপ কাজগুলি ক্ষমা করে দেন। বিশেষত সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সা. এর উম্মতের প্রতি মহান আল্লাহর এই দান অনেক গুন বেশী। যেহেতু এই উম্মত সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে সুতরাং তাদের নেক আমলের পরিমান অবশ্যই পূর্ববর্তিদের তুলনায় বেশী হতে হবে। তথাপি এই উম্মতের হায়াত ও অন্যন্যদের তুলনায় কম দেওয়া হয়েছে। তাই মহান আল্লাহ অনুগ্রহবশত আমাদের নেক কাজের প্রতিদান গুনে গুনে বৃদ্ধি করেছেন। যাতে অল্প দিনের ইবাদতের দ্বারা আমরা পূর্ববর্তিদের থেকেও বেশী অগ্রগামী হতে পারি।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন-
যে ব্যক্তি কোন ধরনের একটি নেক আমল করে বিনিময়ে তাকে ১০টি নেকী দান করা হয়। তবে কেউ যদি কোন পাপকাজ করে তবে তাকে কেবলমাত্র একটি পাপের শাস্তিই প্রদান করা হবে। (সুরা আনআম-১৬০)
নিন্মুক্ত হাদীসে বিষয়টি সম্পর্কে আরো পরিষ্কার ধারনা রয়েছে-
আল্লাহ তায়ালা যখন সকল নেকীর কাজ ও পাপকাজের বিষয়গুলি চুড়ান্ত করলেন তখন এ সিদ্ধান্তও গ্রহন করেছেন যে, যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না, আল্লাহ তা’আলা তাঁর কাছে এর জন্য পূর্ণ নেকী লিপিবদ্ধ করবেন। আর সে ইচ্ছা করল ভাল কাজের এবং তা বাস্তবেও পরিণত করল তবে আল্লাহ তা’আলা তার কাছে তার জন্য দশ গুন থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত এমন কি এর চেয়েও অনেক গুণ বেশি সাওয়াব লিখে দেন। আর যে ব্যক্তি কোন অসৎ কাজের ইচ্ছা করল, কিন্তু তা বাস্তবে পরিণত করল না, আল্লাহ তাআলা তার কাছে তার জন্য পূর্ন নেকী লিপিবদ্ধ করবেন। আর যদি সে ওই অসৎ কাজের ইচ্ছা করার পর বাস্তবেও তা করে ফেলে, তবে তার জন্য আল্লাহ তাঁআলা মাত্র একটা পাপ লিখে দেন। (৬৪৯১)
এছাড়া বিচারের দিনে আল্লাহ তায়ালা অনেকের গোনাহের দিকগুলি গোপন করে দিবেন এবং ভাল কাজগুলি উল্লেখ পূর্বক তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ জাহান্নাম হতে সবার শেষে উদ্ধারপ্রাপ্ত ও জান্নাতে সবার শেষে প্রবেশকারী লোকটিকে আমি অবশ্যই জানি। কিয়ামতের দিন তাকে উপস্থিত করে ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দেয়া হবে যে, এ ব্যাক্তির সগীরা গুনাহগুলো তার সামনে পেশ কর, আর কবীরা শোনাহগুলো আলাদা তুলে রাখ। ফেরেশতাগণ তার সম্মুখে সগীরা গুনাহগুলো উপস্থিত করবেন। ঐ ব্যাক্তিকে বলা হবে, তুমি অমুক দিন এ পাপ কাজ করেছিলে? অমুক দিন এ কাজ করেছিলে? সে বলবে, হ্যাঁ। সে কোনটার অস্বীকার করতে পারবে না। আর কবীরা গুনাহগুলো পেশ করা হলে সে ভয় করতে থাকবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, তোমার এক একটি গুনাহর স্থলে একটি নেকী দেওয়া হল। লোকটি বলবে, হে প্রতিপালক! আমি আরও অনেক অন্যায় কাজ করেছি, যেগুলো এখানে দেখছি না। এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে, তাঁর মাড়ির দাঁতগুলো পর্যন্ত ভেসে উঠল। (বুখারী-২৭১৩)
বলাবহুল্য রমজানে মহান আল্লাহর এই নিয়ামত এতটাই ব্যাপকতা লাভ করে যে, একটি নফল ইবাদতের প্রতিদান একটি ফরজ পরিমান বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি ফরজ আদায়ের প্রতিদান ৭০টি ফরজ আদায় পরিমান বৃদ্ধি করা হয়। (বাইহাক্বী-৫/২২৪)
(লেখক : শিক্ষক, ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়ী গেট, খুলনা )