খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

রোজাদারের জন্য ১০টি বিশেষ পুরস্কার

মুফতি আনিস বিন ওমর

সুন্নাত তরিকায় সম্পাদন করলে প্রত্যেক আমলেরই সওয়াব আছে। তবে আমলসমুহের মধ্যে রোজা একটি অন্যতম কঠিন আমল। তাই রোজার বিনিময়ও অন্য যে কোন আমল থেকে অনেক বেশি। রোজাদারের জন্য রয়েছে সতন্ত্র কিছু সওয়াব, কিছু আলাদা পুরস্কার। যা সিয়াম পালনকারীকে এক অনন্য মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে। নিচে তার কিছু পেশ করা হলো।

১. রোজার প্রতিদান আল্লাহ তা’আলা নিজেই দিবেন
প্রতিটি আমলের বিনিময় আল্লাহ তা’আলা ফেরেস্তাদের মাধ্যমে দিয়ে থাকেন। আমলের সওয়াব দেয়ার ব্যাপারে ফেরেস্তাদের জন্য একটি লিমিটেশন আছে। কিন্তু রোজা এমন একটি ইবাদত যা আল্লাহ শুধু আল্লাহর জন্যই হয়ে থাকে। যেখানে লৌকিকতার কোন সুযোগ থাকে না। এজন্য হাদিসে এসেছে, বনী আদমের নেক কাজের সওয়াব দশগুন থেকে ৭০০ গুন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। তবে আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা দিয়েছেন- إِلَّا الصَّوْمَ، فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي কিন্তু রোজা আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দিবো। সহীহ মুসলীম ২৫৯৭।
সুতরাং রোজার বিনিময় তিনি কি পরিমাণ বাড়িয়ে দিবেন তা শুধু তিনিই জানেন।

২. কেয়ামতের দিন রোজাদারকে পানি পান করানো হবে

কাউকে দেখানোর জন্য নয়, বরং রোজাদার শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই খুতপিপাশায় থাকে। তৃষ্ণায় কাতর হয়ে সুযোগ থাকা সত্বেও পানি পান করে না। রোজাদারের এই ত্যাগের বিনিময়ে সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহ তা’আলা তাকে এক মহা পুরস্কার দিবেন। রসুল স. বলেন – إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى قَضَى عَلَى نَفْسِهِ أَنَّهُ مَنْ أَعْطَشَ نَفْسَهُ لَهُ فِي يَوْمٍ صَائِفٍ سَقَاهُ اللَّهُ يَوْمَ الْعَطَشِ আল্লাহ তা’আলা নিজের উপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য তৃষ্ণার্থ থাকে কেয়ামতের কঠিন দিনে আল্লাহ তা’আলা তাকে তৃষ্ণা নিবারণের পানি পান করাবেন। মুসনাদে বায্যার ৪৯৭৪।

৩. রোজাদারের জন্য জান্নাতের বিশেষ দরজা

রোজাদারকে আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে একটি বিশেষ সম্মান দিবেন, যা অন্য কারোর জন্য হবে না। রসুল স. বলেন -إِنَّ فِي الجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، يُقَالُ: أَيْنَ الصَّائِمُونَ؟ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম ‘রাইয়ান’। কেয়ামতের দিন রোজাদাররা সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। রোজাদারদের সাথে আর কেউ যেতে পারবে না। আহবান করা হবে, রোজাদাররা কোথায় ? তাঁরা দাড়িয়ে যাবে। রোজাদার ছাড়া আর কেউ সেখান দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। যখন তাদের প্রবেশ করা শেষ হবে, দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেখান দিযে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। সহীহ বুখারী ১৮৯৬।

৪. রোজা বান্দার জন্য ঢাল স্বরুপ

ঢাল দিযে মানুষ যুদ্ধক্ষেত্রে আত্মরক্ষা করে। রোজাও তেমনি জাহান্নাম থেকে বাচার জন্য ঢালের মত। রসুল স. বলেছেন – قَالَ رَبُّنَا عَزَّ وَجَلَّ: الصِّيَامُ جُنَّةٌ يَسْتَجِنُّ بِهَا الْعَبْدُ مِنَ النَّارِ، وَهُوَ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِه আমাদের রব বলেছেন, রোজা ঢাল স্বরুপ, যা দিয়ে বান্দা জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করবে। আর রোজা শুধু আমার জন্য, আমি নিজেই তার প্রতিদান দিবো। মুসনাদে আহমাদ ১৪৬৬৯।

৫. রোজা বান্দার জন্য সুপারিশ করবে

কেয়ামতের দিন বান্দাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্য রোজাকে সুপারিশ করার অনুমতি দেয়া হবে। রোজা বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। হাদিসে এসেছে – الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، يَقُولُ الصِّيَامُ: أَيْ رَبِّ، مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ، فَشَفِّعْنِي فِيهِ রোজা এবং কুরআন মাজীদ কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে পানাহার ও জৈবিক চাহিদা থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল কর। মুসনাদে আহমাদ ৬৬২৬।

৬. রোজাদরের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে প্রিয়

অপরিচ্ছন্নতার কারণে নয়, বরং না খেয়ে থাকার কারণে পাকস্থলি খালি থাকায় মুখে যে গন্ধ সৃষ্টি হয়, আল্লাহর কাছে এই গন্ধ খুবই প্রিয়। সহীহ বুখারীতে এসেছে- لَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى مِنْ رِيحِ المِسْكِ রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক আম্বরের ঘ্রাণের চেয়েও বেশি প্রিয়। বুখারী ১৮৯৪।

৭. রোজাদারের দুআ ফেরত দেয়া হয় না

রোজাদারের একটি বিশেষ পুরস্কার হলো, তার দুআ কবুল করা হয়। রসুল স. বলেন إِنَّ لِلصَّائِمِ عِنْدَ فِطْرِهِ لَدَعْوَةً مَا تُرَدُّ ইফতারের সময় রোজাদারের দুআ ফেরত দেওয়া হয় না। সুনানে ইবনে মাজাহ ১৭৫৩।

৮. রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দ

পানাহার করা মানুষের একটি স্বাভাবিক চাহিদা। রোজার কারণে সারা দিন সেটা নিষিদ্ধ থাকে। ইফতারির সময় যতই ঘনিয়ে আসে, খাবারের প্রতি বান্দার চাহিদা ততই তীব্রতর হতে থাকে। যখনই আল্লাহর নিষেধাজ্ঞার এই পর্দা উঠে যায়, তখন মানুষ তার পূর্ণ চাহিদা নিয়ে পানাহারে মনোযোগী হয়। যা তার মনে তৃপ্তি ও প্রশান্তি এনে দেয়। এই জন্য রসুল স. বলেছেন – لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ، وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দ, একটি তার ইফতারের সময়, অপরটি (যার জন্য রোজা রাখা তার সাথে তথা) আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়। সহীহ মুসলীম ২৫৯৭।

৯. একদিন রোজা রাখলে জাহান্নাম ৭০ বছর দুরে চলে যায়

জান্নাত আর জাহান্নামের মালিক যিনি, তার জন্যই তো রোজা রাখা। সুতরাং রোজা যদি শুধু আল্লাহর জন্যই হয়, তাহলে ১দিন রোজার বিনিময়ে জাহান্নাম তার থেকে ৭০ বছর দূরে চলে যাবে। রসুল স. বলেছেন مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُومُ يَوْمًا فِي سَبِيلِ اللهِ، إِلَّا بَاعَدَ اللهُ، بِذَلِكَ الْيَوْمِ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفًا যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখে, আল্লাহ তা’আলা সেই দিন থেকে জাহান্নাম কে তার থেকে ৭০ বছর দুরে সরিয়ে দেন। সহীহ মুসলিম ২৬০১।

এই হাদিসের ব্যাখ্যা ফতহুল বারিতে এভাবে করা হয়েছে- وَقَالَ الْقُرْطُبِيُّ سَبِيلُ اللَّهِ طَاعَةُ اللَّهِ فَالْمُرَادُ مَنْ صَامَ قَاصِدًا وَجْهَ اللَّهِ ফতহুল বারি লি ইবনে হাজার (৬/৪৮) ২৮৪০।

১০. রোজা আল্লাহ নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ট মাধ্যম

হযরত আবু উমামা বাহেলি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুল স. কে বললাম, আমাকে এমন কোন আমলের কথা বলে দিন (যা আমাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করবে) রসুল স. বললেন عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَا عَدْلَ لَه তুমি রোজা রাখ, কেননা এর মত আর কোন আমল নেই। আমি পূনরায় বললাম আমাকে কোন আমলের নির্দেশ দেন, রসুল স. বললেন عَلَيْكَ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَا عِدْلَ لَهُ তুমি রোজা রাখ, রোজার মত আর কোন আমল নেই। সুনানে নাসাঈ ২২২৩।
যে ভাবে রোজা রাখলে তিনি খুশি হন আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সেভাবে রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। রোজাদারের জন্য যত ফজিলত আছে সেগুলো হাসিলের তৌফিক দান করুন। আমিন ॥

(লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, ইমদাদুল উলূম রশিদিয়া মাদরাসা, ফুলবাড়িগেট, খুলনা)

খুলনা গেজেট/এমএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!