খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক আইজপি মামুন ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ ৮ জনকে জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় আনুষ্ঠানিক গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে
  বিশ্বকাপ বাছাই : মার্টিনেজের ভলিতে পেরুর বিপক্ষে জয় পেল আর্জেন্টিনা

রেকর্ড ভেঙে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে সোয়া ৬ কোটি টাকা

গেজেট ডেস্ক

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার সব রেকর্ড ভেঙে ছয় কোটি টাকা জমা পড়েছে। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) মসজিদের সব দানবাক্স খুলে টাকা গোনা হয়। দিনভর গণনা শেষে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গেছে।

এটি মসজিদের ইতিহাসে দানবাক্স থেকে পাওয়া সর্বোচ্চ টাকা। ৩ মাস ২০ দিন পর শনিবার সকালে খোলা হয় ৯টি দানসিন্দুক। এসব সিন্দুক থেকে মোট ২৩ বস্তায় টাকা ভরে গণনার স্থানে নেওয়া হয়। সারা দিন টাকা গণনা করা হয়। এর সত্যতা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক ও মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজের নেতৃত্বে সাতজন ম্যাজিস্ট্রেট, সিন্দুক খোলা কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে খোলা হয় সব দানবাক্স। এরপর পাওয়া যায় ২৩ বস্তা টাকা। বস্তাবন্দি করে টাকা নিয়ে যাওয়া হয় মসজিদের দোতলায়। প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে শুরু হয় টাকা গণনা। মাদ্রাসার শতাধিক খুদে শিক্ষার্থী, ব্যাংকের অর্ধশতাধিক স্টাফ এবং মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মিলে আড়াই শতাধিক লোক টাকা গণনা শুরু করেন।

মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থসম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র। পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্র জানিয়েছে, ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে ৮টি দানবাক্স থাকলেও দানের টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার বাক্স বাড়ানো হয়েছে। এখন পাগলা মসজিদে দানবাক্সের সংখ্যা ৯টি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে ১০ শতাংশ জমির ওপর মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের সঙ্গে পাগলা মসজিদের পরিধির পাশাপাশি বেড়েছে খ্যাতি। মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এই মসজিদে দান করেন। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দান করেন অনেকে। দানের টাকা ব্যাংকে থাকে। ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব-অসহায় মানুষকে আর্থিক সহায়তা, ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের অনুদান দেওয়া হয়। এ ছাড়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের অনুদান দেওয়া হয়।

মসজিদ কমিটির সভাপতি ডিসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাগলা মসজিদ মানুষের একটি আবেগের জায়গা। অনেক মানুষ এখানে তাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য দান করেন। এই দানের টাকায় মসজিদের বড় ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মসজিদ ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন বহুতল কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। যেখানে ৩০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। থাকবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ নানা ব্যবস্থা। কমপ্লেক্সের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে প্রকল্পের কাজ।

টাকা ছাড়াও দানবাক্সে পাওয়া যায় ডলার, ইউরো, সৌদি রিয়েল, ইয়েন, দিনার ইত্যাদি বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালংকার। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের ঢল নামে। সাধারণ মানুষ এমন বিশ্বাসের আলোকে পাগলা মসজিদে প্রচুর দান-খয়রাত করে থাকেন। নগদ টাকাপয়সা, স্বর্ণ ও রুপার অলংকারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন। অধিক দান-খয়রাতের কারণে পাগলা মসজিদ ইতিমধ্যেই দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

শুরুতে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর পাগলা মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধি যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্য। বর্তমানে ৩.৮৮ একর ভূমির ওপর সম্প্রসারিত পাগলা মসজিদ এলাকায় মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাগলা মসজিদে মুসল্লিদের ব্যাপক সমাগমকে ঘিরে পুরাতন অবকাঠামো ভেঙে নতুন অবকাঠামো নির্মাণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!