খুলনার রূপসা উপজেলার ইলাইপুর গ্রামের মাদ্রাসা ছাত্র ও মুদি দোকানী মুসা শিকদার (১৬) হত্যা মামলায় ৪ আসামিকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তাদের ১০ বছরের কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদন্ডাদেশ দেন আদালত।
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা জেলা ও দায়রা জজ মোঃ মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর সাজাপ্রাপ্ত ৪ আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
আসামিরা হলেন, রূপসা উপজেলার আলাইপুরের বনি আমিন শিকদার (২০), রাহিম শেখ (২১), রাজু শিকদার (২০) ও নুহু শেখ (২৭)। মামলার দায় থেকে খালাস পেয়েছেন জসিম শিকদার (৫৯) ও সিরাজ শিকদার (৫২)। রায় ঘোষণার সময় ছয়জন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
খুলনায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) অ্যাডভোকেট এনামুল হক জানান, মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। রায়ে ৩০২/৩৪ ধারায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি বনি আমিন শিকদার, রাহিম শেখ, রাজু শিকদার ও নুহু শেখকে ৩৬৪/৩৪ ধারায় ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ এবং প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে প্রত্যেককে এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। ছয় আসামির মধ্যে চারজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।
মামলার বিবরণে বলা আছে, ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় রূপসা উপজেলার আঠারোবেকি নদীতে আলিপুর গ্রামের মুদি দোকানদার ও মাদ্রাসাছাত্র মুসা শিকদারের লাশ পাওয়া যায়। মুদি দোকানে বাকি খাওয়া ও গুলতি মারা নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে একদিন আগে বিরোধ হয়েছিল। এ বিরোধ ও মারামারি জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এরপর ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতে হত্যার অভিযোগে মামলা করেন মুসার বাবা মোস্তাকিম শিকদার। মামলায় চারজনের নাম দেওয়া হয়। এঁরা হলেন, বনি আমিন শিকদার, রাহিম শেখ, নুহু শেখ ও রাজু শিকদার। আদালতের বিচারক এ মামলাটি তদন্ত করে নথিভুক্ত করার জন্য রূপসা থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। এরপর ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয় (রূপসা থানার মামলা নম্বর ১২, তারিখ ১৫/০১/২০১৯)। মামলাটি তদন্তের জন্য জেলা ডিবিতে হস্তান্তর হয়। জেলা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মুক্ত রায় চৌধুরী মামলাটি তদন্ত করেন। তিনি ২০১৯ সালের ৩০ মে আদালতে ছয়জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এজাহারভুক্ত চারজনের সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া দুজন হলেন জসিম শিকদার ও সিরাজ শিকদার । আসামিরা সবাই আলাইপুরের বাসিন্দা।
২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয় জেলা জজ আদালতে। বিচারক খুলনার সিনিয়র দায়রা জজ মো. মশিউর রহমান চৌধুরী এ মামলার শুনানিকালে ২৪ জনের মধ্যে ২৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে পরিচালনা করেন পিপি এনামুল হক ও এপিপি এম ইলিয়াস খান। আসামিপক্ষে ছিলেন মো. ফরহাদ আব্বাস ও নিরঞ্জন কুমার ঘোষ।
খুলনা গেজেট / এমএম