খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

রিজার্ভ নিয়ে ঝুঁকি কতোটা, করণীয় কী

গেজেট ডেস্ক

বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়ায় নিয়ে নানা আলোচনা চলছে অর্থনীতিবিদ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার বলছেন, রিজার্ভ যথেষ্ট পরিমাণে আছে। তবে অনেকের দাবি রিজার্ভ পরিস্থিতি ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মোট রিজার্ভের পরমাণ ৩৪.৩ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বিভিন্ন তহবিলে বিনিয়োগ করা এবং ঋণ হিসেবে দেয়া আট বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে নেট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬.৩ বিলিয়ন ডলার।

অর্থনীতির তত্ত্ব অনুযায়ী, একটি দেশের তিন মাসের আমদানির খরচের সমমানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অবশ্যই থাকতে হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মত বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর হিসাবটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
অর্থনীতিবিদ ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, “আমাদের থাম্বরুল আছে যে প্রতি মাসে গড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার আমদানির জন্য লাগে। সে হিসেবে সরকারের কাছে বড় জোর তিন মাসের কিছুটা বেশি রিজার্ভ আছে বলা যায়। পাঁচ মাসের নেই।”

তবে তিন মাসের এই রিজার্ভ থাকাকেও তিনি স্বস্তির বলে মনে করছেন না। কারণ এই রিজার্ভের পরিমাণ প্রতিনিয়ত ওঠানামা করছে। রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত অর্থ বেরিয়ে গেলেও সেই পরিমাণে যোগ হচ্ছে না।

রিজার্ভ কী :
একটি দেশের রিজার্ভ হল সেই দেশটির রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্স, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশে বা সংস্থা থেকে পাওয়া ঋণ বা অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। সেই মজুদ থেকে আমদানি, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা বিদেশে শিক্ষা ইত্যাদি খাতে এই মুদ্রা খরচ হয়। মোট মজুদ থেকে এই খরচ বাদ দেয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে যা সঞ্চিত থাকে, সেটাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর দেশ হওয়ায় এখানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ভারসাম্য থাকাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বৈদেশিক মুদ্রার যথেষ্ট সঞ্চয় থাকলে বৈদেশিক ঋণ নেয়াও সহজ হয়।

ফলে রিজার্ভের অর্থ কমে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিপদজনক হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে রিজার্ভের নিম্নমুখীতা দেখছি। কমছে আর কমছে। এমনটা চলতে থাকলে তো এটা তো চিন্তার বিষয়। কিন্তু আমাদের আমদানি বন্ধ করারও উপায় নেই, আমাদের জ্বালানি তেল, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সব আমদানি করতে হবে।”

করণীয় কী :
এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, একটি দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে রিজার্ভ থাকলে বৈদেশিক ঋণ নেয়ার পরিবর্তে রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগ করা যায়।

এক্ষেত্রে হঠাৎ কোন সংকট হলে রিজার্ভে সেই অর্থ ফেরানো সম্ভব হবে কি না সেটা নিরূপণ করা জরুরি- বলেছেন তিনি।

তার মতে, সরকার রিজার্ভের টাকায় যে তহবিল করেছে সেটা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যই ব্যবহার হচ্ছে।
কিন্তু সমস্যা হল, দেশীয় বিনিয়োগ থেকে যে আয় হচ্ছে সেটি টাকায় হয়, ডলারে নয়।

বিনিয়োগের টাকাটা একবারে বেরিয়ে গেলেও সেখান থেকে আয় আসে ধীরে ধীরে। যার কারণে হঠাৎ রিজার্ভের দরকার পড়লে সেটা তৎক্ষণাৎ পাওয়ার উপায় থাকে না।

রপ্তানি-মুখী বিনিয়োগ হলে হয়তো সেটা বৈদেশিক মুদ্রা আনতে কাজে লাগে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেহেতু রপ্তানি-মুখী নয় সেকারণে ঝুঁকি থেকেই যায় বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে সরকারকে চার ধাপে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ফাহমিদা খাতুন।

প্রথমত, তিনি অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানী নিয়ন্ত্রণ করার ওপর জোর দিয়েছেন।

দ্বিতীয়ত, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স যেন ব্যাংকিং চ্যানেলে আসে সে ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নিতে বলেছেন।

তৃতীয়ত, ডলার এবং টাকার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। যেন সব জায়গায় দাম সমান বা কাছাকাছি থাকে।

সবশেষে আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অনেক ডলার বিদেশে রয়ে যাচ্ছে, সেগুলো দেশের অর্থনীতিতে যোগ করার ব্যবস্থা করতেও বলেছেন তিনি।

আমদানিকারক ১০০ ডলারের এলসি খুললেন এবং ব্যাংক থেকে সেই টাকা বিদেশে চলে গেল। কিন্তু তিনি কিনলেন ৩০ ডলারের পণ্য। বাকি ৭০ ডলার তিনি বিদেশের অ্যাকাউন্টে রেখে দিলেন। এটি ওভার ইনভয়েসিং।

অন্যদিকে আন্ডার ইনভয়েসিং হল রপ্তানিকারক বিদেশে ১০০টাকার পণ্য বিক্রি করলেন কিন্তু দেশে আনলেন ৩০ ডলার। বাকিটা বিদেশের অ্যাকাউন্টে রেখে দিলেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!