খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৭ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার

রাস উৎসবের ঢেউ নেই, পুণ্যস্নান আজ

মোহাম্মদ মিলন, সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে

সুন্দরবনের পাশে ছোট্ট একটি দ্বীপ দুবলার চর। প্রায় দুইশত বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের বুকে কুঙ্গা এবং মরা পশুর নদীর মোহনায় জেগে ওঠা এ চরে চলে আসছে রাস মেলা।

গেল বছর ২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে কারণে রাস পূজা ও পুণ্যস্নান উপলক্ষে কোনো মেলা হয়নি। এবারও করোনা পরিস্থিতিতে রাস পূজায় কোন মেলা হচ্ছে না। তবে বন বিভাগের নির্ধারিত বিভিন্ন শর্ত মেনে শুধুমাত্র সনাতন ধর্মালম্বীরা রাস পূর্নিমার পূজা ও পুণ্যস্নানে অংশগ্রহণ করতে পারছেন। রোববার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সুন্দরবনের দূবলার চরে রাস পূজা ও সোমবার (৩০ নভেম্বর) সকালে দূবলার চর-সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে এবারের রাস উৎসব শেষ হবে।

ঢাকের বাদ্য, মুহুর্মুহু উলুধ্বনি, ধূপ আর পূজার নৈবেদ্যতে চলছে রাস পূজা। করোনার কারণে এবার রাস পূজাকে কেন্দ্র করে বসেনি মেলা। ঐতিহ্যের রাস উৎসব ঘিরে নেই তেমন লোক সমাগমও। করোনাকালে উৎসবের অন্যান্য অনুষঙ্গ ছাড়া শুধুই প্রথা মেনে পালিত হচ্ছে রাসপূজা। রাস ময়দানে বসেনি তেমন কোন দোকানপাট।

রাস পূজায় বাদ্য, নৃত্য, গীত ও বিবিধ প্রকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলেও পসরা সাজিয়ে বসেনি কুটির শিল্পের দোকান। মিষ্টান্ন ও কয়েকটি খাবারের দোকান ছাড়া চোখে পড়েনি কিছুই।

শর্তগুলো হচ্ছে, সুন্দরবনে প্রবেশ থেকে শুরু করে সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে ভক্তবৃন্দের। রাসপূজাগামী সকল জলযানে এবং পূজাস্থলে পর্যাপ্ত পরিমান স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী (হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হ্যান্ডওয়াশ) রাখা হয়েছে। পূজার জায়গায় শুধুমাত্র সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রবেশ করতে দেখা গেছে।

রাস মেলায় প্রবেশের জন্য পাঁচটি রুট নির্ধারণ করে বনবিভাগ। রুটগুলো হচ্ছে, বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক থেকে বাটুলা নদী, বল নদী, পাটকোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী অতঃপর দুবলার চর। কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়ুয়া, শিবসা নদী মরজাত হয়ে দুবলার চর।

এবারের রাস পূজায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বনরক্ষীদের পাশাপাশি র‌্যাব-৬, কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটও নিয়োজিত রয়েছেন।

আগে দূর-দূরান্ত থেকে রাস মেলা উপলক্ষে পর্যটকরা আসতেন। এমনকি ভারতসহ আশেপাশের বেশ কিছু দেশ থেকেও পর্যটকরা আসতেন। এবার মেলা না হওয়ায় ও বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞার কারণে কোন পর্যটক আসেননি। সাজসজ্জাও নেই তেমন।

স্থানীয় বাসিন্দা মহিতোষ বিশ্বাস বলেন, প্রতি বছরই আসি রাস মেলায়। আগে অনেক মানুষ হতো। এ বছর তেমন মানুষ নেই। তাই তেমন একটা জমে উঠেনি। শুধু রাসপূজাটাই হচ্ছে মেলা আর হচ্ছে না।

খুলনার বটিয়াঘাটা থেকে আসা কবিতা রাণী বলেন, আগে কখনও আসিনি। এবার এসেছি পরিবার নিয়ে পূন্যস্নান করে সব পাপ ধুয়ে ফেলতে।

রাস উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি এসএম কামাল হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, রোববার বিকেল ৫টায় পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে রাস উৎসব। সোমবার ভোর ৬টায় পূণ্যস্নানের মধ্যদিয়ে শেষ হবে রাস পূজা। সনাতন ধর্মালম্বীরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পূজার আনুষ্ঠানিকতা পালন করছেন। এখানে যারা স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে আসেননি, তাঁদের জন্য স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।

বন কর্মকর্তা মোকাম্মেল বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সরকার এ বছর রাসমেলা করতে না দেওয়ায় শুধু রাস উৎসব হচ্ছে। যে কারণে শুরু সনাতন ধর্মালম্বীরা আসতে পেরেছেন। আগে ৫০ হাজারের বেশি হতো কিন্তু এবার প্রায় ১০ হাজারের মতো লোক এসেছে।

প্রতিবছর কার্ত্তিক মাসে হিন্দু-ধর্মাবলম্বীদের রাসমেলা এবং পুণ্যস্নানের জন্য দুবলার চর বিখ্যাত। যদিও বলা হয়ে থাকে, ২০০ বছর ধরে এ রাসমেলা হয়ে চলেছে।, তবে জানা যায়, ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে হরিচাঁদ ঠাকুরের এক বনবাসী ভক্ত, নাম হরিভজন ১৮২৯ সাল থেকে ১৯২৩ সাল পর্যন্ত এই মেলা চালু করেন। প্রতিবছর অসংখ্য পুণ্যার্থী রাসপূর্ণিমাকে উপলক্ষ্য করে এখানে সমুদ্রস্নান করতে আসেন। দুবলার চরে সূর্যোদয় দেখে ভক্তরা সমুদ্রের জলে ফল ভাসিয়ে দেন। কেউ বা আবার বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ভজন-কীর্তণ গেয়ে মুখরিত করেন চারপাশ।

আবার কারো কারো মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এ উপলক্ষেই দুবলায় পালিত হয়ে আসছে রাস উৎসব।

 

খুলনা গেজেট / এআর




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!