বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, রাষ্ট্রের বেশিরভাগ জায়গায় ফ্যসিবাদের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে। প্রশাসন থেকে সেই ফ্যাসিবাদ দোসরদের বিদায় করুন।’ জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি আবারও বলেন, ‘আসুন স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বিরোধ বিশৃঙ্খলার ভূমিকায় না গিয়ে জুলাই-আগস্টের মূল চেতনাকে ধারণ করে আমরা একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গঠনে এগিয়ে যাই।’
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল তিনটায় খর্ণিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ডুমুরিয়া উপজেলা শাখার ৪নং খর্ণিয়া ও ৭নং শোভনা ইউনিয়নের দায়িত্বশীলদের যৌথ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সংস্কার ও নির্বাচন দ্রুত সম্পন্ন করুন। যৌক্তিক সময় যেটুকু লাগবে জামায়াতে ইসলামী সেটুকু সময় দেবে। তবে এ নির্বাচনের আগে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কাজ জনগণ দেখতে চায়।’ ১৫ বছর নতুন প্রজন্মের যারা ভোটার হয়েছে, তারাসহ আমরা সবাই ৩টি নির্বাচনে ভোট দিতে পারি নাই। ভোটের দিন সকালে জনগণ ভোট দিতে যাবে, তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশলীগ বাঁধা দিয়েছে। বলেছে ভোট হয়ে গেছে, তোমরা বাড়ি চলে যাও। যারা শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধিতা করেছে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এমনকি বুলডোজার দিয়ে তিনতলা বিল্ডিং পর্যন্ত ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। যারা সরকার বিরোধী আন্দোলন করেছে তাদের চাকরি হয়নি। বিভিন্ন পরীক্ষায় পাস করেও যখন পুলিশি তদন্ত হয় তখন বলা হয় জামায়াত-শিবির পরিবারের সদস্য, তাই সরকারি কোন চাকরি হয়নি। বিরোধী দল হলেই তাদেরকে আর সরকারি চাকরি দেয়া হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিসহ সব সুযোগ-সুবিধা একটি দল ও একটি পরিবারের কাছেই গত ১৫টি বছর জিম্মি ছিল।’
গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করতে মাঠে-ময়দানে ছড়িয়ে পড়তে হবে। অসহায় মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে হবে। অসহায় মানুষকে আর্থিকভাবে উন্নয়ন করতে জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামের আদর্শ দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী এ দেশের মানুষকে আধিপত্যবাদ মুক্ত একটি উন্নত ইসলামি কল্যাণরাষ্ট্র উপহার দেবে ইনশা আল্লাহ।
সার্জেন্ট (অব.) আবুল হোসেন এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, উপজেলা আমীর মাওলানা মুখতার হুসাইন, সেক্রেটারি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি আব্দুর রশিদ বিশ্বাস ও মাওলানা ফরহাদ আল মাহমুদ। এতে অন্যন্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন জামায়াত নেতা আলমগীর হোসেন, শোভনা ইউনিয়ন সভাপতি শেখ মোসলেম উদ্দিন, আটলিয়া ইউনিয়ন সেক্রেটারি হাফেজ মঈন উদ্দীন, শোভনা ইউনিয়ন সেক্রেটারি আবুল বাসার, মাওলানা মজিবুর রহমান, মোজতবা কামাল, ওহিদুল ইসলাম খান, আবু সুফিয়ান, শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, কুরআনের সঙ্গে আমাদের নিজের জীবনকে মেলাতে হবে। কিয়ামতের কঠিন দিনে এই কুরআনই সুপারিশকারী হবে। ইসলামী আন্দোলনের এক দায়িত্বশীল হিসেবে কুরআনের চর্চা কতখানি করতে পারছি, তা অনুধাবন করতে হবে। আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত ও রাসুল (সা.) এর আদর্শ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি বলেন, মক্কায় ১৩ বছর মানুষের মধ্যে আল্লাহর রাসুল (সা.) ইকামাতে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছিলেন। ফলে অতি অল্প সময়ে মদিনায় ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জামায়াত বাংলাদেশে ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, মানুষ হিসেবে আমরা আল্লাহর কাছে ওয়াদা করে এসেছি, নিশ্চয়ই আল্লাহই আমাদের রব। তিনি আমাদের হুকুমদাতা। তিনি আমাদের বিধানদাতা, রিজিকদাতা সবকিছু। এটা স্বীকার করেই আমরা দুনিয়ায় এসেছি। পৃথিবীর কোনো ঘরই আমাদের জন্য স্থায়ী নয়। আখেরাতের স্থায়ী ঘর নির্মাণের জন্য আমাদের ব্যাকুল থাকতে হবে। পবিত্র কুরআনের সুরা আল কাসাসে বর্ণিত নির্দেশনার আলোকে জামায়াতের নেতাকর্মীদের মাঠে-ময়দানে ভূমিকা রাখতে হবে।
খুলনা গেজেট/ টিএ