খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ পৌষ, ১৪৩১ | ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  জাহাজে ৭ খুনে জড়িতদের বিচার দাবিতে সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতি শুরু
  মারা গেছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং

রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকার পরে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আবারও উৎপাদন শুরু হয়েছে। কেন্দ্রটির উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে চারশত পঞ্চাশ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কনফারেন্স কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) এর প্রকল্প পরিচালক সুভাষ কুমার পান্ডে।

তিনি বলেন, বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টার দিকে কয়লা সংকটে বন্ধ হওয়া প্রথম ইউনিটে উৎপাদন শুরু হয়েছে। বর্তমানে ৩০ হাজার মে. টন কয়লা রয়েছে। আরও ৫৫ হাজার মে.টন কয়লা দুই চার দিনে চলে আসবে। কয়লা আমদানিতে যে জটিলতা ছিল তা সমাধান হয়েছে। এখন থেকে নিয়মিত কয়লা আসবে।এখন থেকে নিয়মিত উৎপাদন হবে।

কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সুন্দরবনের ক্ষতির বিষয়ে কোন উদ্যোগ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ নিয়েছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সুভাষ কুমার পান্ডে বলেন, ইকোলজিকালি সব ধরণের বিষয় চিন্তা করে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে। এই কেন্দ্র কিন্তু ইতোমধ্যে উৎপাদনে রয়েছে। কোন ক্ষতি তো হচ্ছে না।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, আমরা বন্ধ হওয়া প্রথম ইউনিট থেকে আবারও উৎপাদন শুরু করেছি। কয়লা আমদানিতে যে জটিলতা ছিল তা এখন কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। আশাকরি এখন থেকে নিয়মিত উৎপাদন করা সম্ভব হবে।

আনোয়ারুল আজিম বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট প্রতিদিন চালিয়ে রাখতে ৫ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়। সেই অনুযায়ী ৩০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা দিয়ে মাত্র ছয় দিন কেন্দ্রটির একটি ইউনিট চালানো যাবে। পরবর্তীতে ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা এলে তা দিয়ে কেন্দ্রটি আরো ১০ দিন চালানো যাবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে একটি জাহাজ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জেটিতে ভিড়তে ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগে।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানাগেছে, কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত হওয়ায় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ উৎপাদন শুরু হয়েছে। ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি করতে না পারায় ১৪ জানুয়ারি রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে কয়লা আমদানির চেষ্টা করছিল বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) কর্তৃপক্ষ। বন্ধ হওয়ার ২৬ দিন পরে ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩০ হাজার টন কয়লা নিয়ে মোংলা বন্দরে আসে বিদেশী জাহাজ। পরে এই কয়লা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা ইয়ার্ডে আনা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে আরও একটি জাহাজ মোংলা আসার কথা রয়েছে। কেন্দ্রটিতে কয়লা মজুদের সক্ষমতা রয়েছে তিন মাসের। নিয়ম অনুযায়ী এক মাসের কয়লা মজুদ রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ডলার সংকটে এত দিন কেন্দ্রটিতে কয়লার কোনো মজুদ ছিল না বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে।

অন্যদিকে কয়লা ও ডলার সংকটের মধ্যেও আগামী ৩০ জুনের মধ্যে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলাচ্ছেন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ, ২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লিঃ এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাঃ) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। এই কোম্পানির অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান শুরু হয় ।

রমাপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় ১ হাজার ৮‘শ ৩৪ একর জমি অধিগ্রহন শেষে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান শুরু হয়। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই শুরু হয় জমি ভরাট ও সড়ক নির্মাণের কাজ। প্রায় ৯ বছর বিশলা কর্মযজ্ঞ শেষে বানিজ্যিকভাবে উৎপাদনে গেল প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে গেল বছরের ১১ জুলাই বয়লার স্টিম ব্লোয়িং স্থাপন করা হয়। এক মাস পরে ১৪ আগস্ট টারবাইন-এ স্টিম ডাম্পিং এবং একদিন পরে ১৫ আগস্ট জাতীয় গ্রীডের সাথে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ (ট্রান্সমিশন) শুরু করা হয়। পরে ১৭ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় গ্রীডে বানিজ্যিকভাবে যুক্ত হয় এখানের বিদ্যুৎ। কিন্তু কয়লা সংকটে ১৪ জানুয়ারি প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

খুলনা গেজেট/ বি এম এস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!