বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গিলাতলা সরকারি বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্র শোয়াইব সেখ (১৬) নিজ বাড়ীতে ঘরের আড়ার সাথে রশি নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় রামপাল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাটের মর্গে প্রেরণ করেছে।
পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, শিক্ষকদের মানষিক চাপ প্রয়োগর কারণে সোয়াইব আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
জানা গেছে, উপজেলার গিলাতলা হাওলাদার পাড়া গ্রামের রুহুল সেখের পুত্র সোয়াইব স্থানীয় গিলাতলা সরকারি বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। তার বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিত ১৪ মে/২০২২ তারিখ একটি কারণ দর্শনোর নোটিশ পাঠান। ওই একই দিনে সোয়াইবের পরিবারের সদস্যরা নোটিশটি হাতে পান। এরপর ছাত্রের চাচা সাইফুল ইসলাম তার ভাতিজা সোয়াইবকে সাথে নিয়ে বিদ্যালয়ে যান। তারা লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে প্রধান শিক্ষকের পা ধরে মাপ চান। এ সময় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক উজ্জ্বল পাল তাদের তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ করেন। এতে সোয়াইব ভেঙ্গে পড়ে। ওইদিন রাত সাড়ে ৯ টায় নিজ বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
সাংবাদিকরা নিহতের বাড়িতে গেলে তার স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। খবর পেয়ে তার সহপাঠীরা মৌন প্রতিবাদ করে সাংবাদিকদের পথ আটকিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তারা অভিযোগ করে বলে যে, প্রধান শিক্ষক স্যার সুশান্ত কুমার পাল ও উজ্জ্বল পাল স্যার সোয়াইবকে মানুষিকভাবে চাপ প্রয়োগ করার কারণে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। তারা তদন্তসহ বিচার দাবি করে।
একই অভিযোগ করেন সোয়াইবের চাচা সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, এটা আত্মহত্যা নয়, প্রধান শিক্ষক ও উজ্জ্বল বাবুর মানুষিক চাপ প্রয়োগের কারণে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
সোয়াইবের পিতার অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার পালের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি আমার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় এর অনুমতিক্রমে নোটিশ করেছি। যা কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সব কিছু নিয়ম মেনেই। আমি ও শিক্ষক উজ্জ্বল বাবু তাদের সাথে অভিভাবক সুলভ আচারণ করেছি। এমন কোন কথা তাদের বলিনি যে তারা কষ্ট পায়। তবে ঘটনার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
এ ঘটনার বিষয়ে রামপাল থানার ওসি তদন্ত রাধেশ্যামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপমৃত্যু মামলা দায়ের পূর্বক লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাটের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা বিধি অনুযায়ী গ্রহণ করা হবে।
ছাত্র আত্মহত্যার ঘটনার বিষয়টি রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, শিশুদের প্রতি আমাদের মানবিক আচারণ করতে হবে। আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো কেন কি কারণে ওই ছাত্র আত্মহত্যা করেছে ? এর জন্য কারো কোন গাফিলতি আছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহতের লাশ তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। লাশ বাড়িতে আনার পর এলাকায় শোকের মাতম বইছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই