ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পর খুলনাসহ সারাদেশে পেঁয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। এক রাতের ব্যবধানেই নগরীর বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩৫-৪০ টাকা। রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নগরীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, সোমবারের তুলনায় পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। গতকালও যা বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকা। আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৬০-৬৫ টাকা। গতকাল যা ছিল কেজি প্রতি ৪০-৪৫ টাকা।
পাইকারি বাজার ঘুরেও দেখা যায় একই চিত্র। সোমবার আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৮-৪০ টাকা, মঙ্গলবার তা বিক্রি হচ্ছে ৪৬/৫০ টাকা। আর সোমবার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৮ টাকা, মঙ্গলবার তা ৬৫-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার পরদিনই বাজারে পেঁয়াজের দামের এমন উর্দ্ধগতি। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানেই দ্বিগুণ হয়েছে পেঁয়াজের দাম।
ক্রেতাদের অভিযোগ, পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দামের ব্যবধান অনেক। সরকারের যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে পাইকারি থেকে খুচরা বাজারে দামের ব্যবধানটা এত বেশি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, গেল বছরের পেঁয়াজের দামের মত অবস্থা হয়তো সৃষ্টি হতে চলেছে।
গল্লামারী বাজারে ক্রেতা আফজাল হোসেন বলেন, এভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে। ইতোমধ্যে পেঁয়াজ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অবিলম্বে সরকারকে ভারত নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প দেশ খোঁজা উচিত। না হলে প্রতি বছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
অপর এক ক্রেতা তরিক ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ যেদিন ইলিশ রপ্তানি করল সেদিনই ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিল। এতে তিনি ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
খুচরা ব্যবসায়ী শওকত হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় আমাদেরও দাম বাড়াতে হয়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ী সেলিম বয়াতি জানান, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি ব্ন্ধ করায় আমাদের দেশে দাম বেড়েছে। তবে এক রাতের ব্যবধানে কিভাবে এত দাম বাড়লো তার কোন সদুত্তোর তিনি দিতে পারেননি।
পেঁয়াজ আমদানিকারক ইসমাঈল হোসেন বলেন, ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু সেই কারণে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার কোন কারণ দেখিনা। এটা তাদের দাম বৃদ্ধির কৌশলও হতে পারে।
জানা যায়, ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্য শুরুর পর থেকে ২৫০ মার্কিন ডলারে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে আসছে। ভারতের নাসিকে বন্যার কারণে সেখানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এতে রফতানিকারকরা স্থানীয় বাজার দর হিসাবে ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজের রফতানি করবে না। এ কারণে তারা পেঁয়াজের রফতানি সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে দেশের বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, পাশাপাশি বাজার স্থিতিশীল করার জন্য সরকার গত রবিবার থেকে ট্রেডিং কর্পোরেশান অব বাংলাদেশ(টিসিবি)র মাধ্যমে খোলা বাজারে ৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। কিন্তু পেঁয়াজের উর্দ্ধমূল্যের লাগাম টানতে তা বাজারে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
উল্লেখ্য, গত দুই সপ্তাহ আগেও পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক ছিল। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়। এখন তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের প্রেক্ষিতে দেশের পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকার তুরস্ক থেকে ১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খুলনা গেজেট / এমএম