লোনাপানির অঞ্চলের মানুষ রাহাত খান। লোনা পানি এলাকায় আদি বাস হলেও রাহাতের জন্ম শহরে। বাবার চাকরি সূত্রে রাহাতের বেড়ে ওঠা শহরে। লেখা পড়া করেছেন নাম করা বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছোট বেলা থেকে রাহাত একটু গোলগাল, শরীরের রং চাপা। কিন্তু ঠান্ডা স্বভাবের মানুষ। কখনো কারো সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ তো দূরের কথা, মনোমালিন্য করে না।
মনোমালিন্য যদি হয়ও তবে সেই আগে যেয়ে যার সাথে মনোমালিন্য হয় তার কাছে মাফ চেয়ে নেয়। রাহাতের ডাক নাম রাতু। শরীরের রং চাপা হওয়ার কারনে দাদা দাদী বাদে আপন জনরাও রাতুকে নিয়ে টিপ্পনী কাটতো। রাতু এতে মনে মনে আঘাত পেলেও তা প্রকাশ করত না। শহর থেকে রাতু যখন বাড়ি যেত তখন রাতুকেই বাড়ির বাজার টানা থেকে সব কাজ করতে হতো। রাতুর চাচাতো ভাই রা বা তার নিজের ভাই বা বোন ফর্সা হওয়ায় তাদের নিয়ে সকলে গর্ব করতো।
তাদের দিয়ে কেউ কোন কাজ করাতো না। সব কাজ করতে হবে রাতুকে। রাতু সব সময় লেখা পড়া ভালো ছিল। ছোট্ট বেলা থেকে সে বৃত্তি নিয়ে লেখা পড়া করেছে। কিন্তু আপনজনদের দ্বারা সে সকল দিক দিয়ে ঠকেছে।
রাতু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতো এবং বহুবার বিজয়ী হয়েছে। ঘর ভরা পুরস্কার ও সার্টিফিকেট রয়েছে তার। এগুলো দেখে আর অতীতে ফিরে যায়।
সাহিত্য ও সংস্কৃতির কারনে কয়েকটি ভালো সরকারি চাকরি পেয়েও রাতু সে চাকরি করে নাই। এজন্য তার আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। তবে সমাজে ভালো মানুষ হিসেবেও তার পরিচিত বেশ।
সাহিত্যিক মানুষের মধ্যে প্রেম ভালোবাসা থাকে। কিন্তু রাতুর মধ্যে তা ছিল না বললেই চলে। রাতু মনে করতো এ সব ফেক। তাই সে কখনো কাউকে পাত্তা দিত না। ভালো ছাত্র ও সাহিত্যমনা হওয়ার কারণে অনেকেই তার কাছ থেকে লেখা পড়ার সহযোগিতা নিতো। আর যারা সহযোগিতা নিত তারা আজ সমাজে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু রাতু যে তিমিরে ছিলো সেই তিমিরে রয়ে গেছে। এতে তার কোন আফসোস নেই। অনেক সময় ঐ সকল বন্ধুরা নিজেদের অতীত নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলে তখন রাতু মনে মনে হাসে। কারণ রাতু জানে কার অবস্থা কেমন ছিল। আর ঘুষ খেয়ে, মানুষকে ফাঁকি দিয়ে কে কোথায় উঠেছে। তারাও এখন রাতুকে ফাঁকি দিতে চায়। রাতুর তাতে কিছু আসে যায় না। রাতুকে তার এলাকায় সকলে এক নামে চেনে। সালাম দেয়। তার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের সিনিয়র ও জুনিয়র অনেক দেখা হলে বলে আপনি রাহাত ভাই না। এতে রাতু মনে মনে খুশি হয়।
রাতু বিয়ে করেছে। তিনটি সন্তান আছে। দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলেকে বিয়ে দিয়েছে। রাতুল স্ত্রী আয়শা অনেক ভালো মহিলা। শিক্ষিতা ও বুদ্ধিমতি। রাতুর সঙ্গে তার সম্পর্কের কোন টানাপোড়েন নেই।
চাহিদা কম থাকায় আর্থিক অনটনেও পড়তে হয়নি কোন দিন। তার শশুর অনেক ধনী হওয়ার পরও সে ও তার স্ত্রী (বাপের বাড়ি) থেকে কিছু নেয়নি।
উপরন্তু রাতুরের আপজনরা এখন তার সম্পত্তি গ্রাস করবার জন্য টাল বাহানা করছে।
যাদের বিপদ আপদে সে দৌড়ে যায়। তারাও দেখে না দেখার ভান করে।
তবে রাতুর জীবনে বয়সের মধ্যে গগনে এসে একজন বন্ধু পেয়েছে। যার সাথে তার দেখা হয়নি। কিন্তু তার পরামর্শ তার চলার পথে পাথেয় হিসেবে কাজ করছে। তার ডাক নাম যাত্রা। দুজন দুমেরুর মানুষ। তবে বোঝা পড়াটা বেশ ভালো। কিন্তু তারা জানে দুই মেরুর বাসিন্দা হওয়ায় শুধু কথা আর পরামর্শের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। তারপরও রাতু ভাবে এই বন্ধু কি ঠকাতে পারে। আবার ভাবে এই যাত্রায় যাত্রা অটুট থাকবে।
খুলনা গেজেট/এমএম