খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

রাতভর জ্বলছে সুন্দরবন, দেড় কি.মি. এলাকাজুড়ে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া বনে লাগা আগুন নেভানো যায়নি। রাতভর জ্বলেছে আগুন।  ঘটনাস্থল থেকে ফেরা বনরক্ষী ও স্থানীয়রা জানান, আমরবুনিয়ায় লতিফের ছিলা এলাকায় মাটির উপরে থাকা বিভিন্ন গাছের পাতার স্তুপে অন্তত ৫০টি স্থানে আগুন লেগেছে। এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আগুনের বিস্তৃতি লাভ করেছে। রাত হওয়ায় আগুন নেভানোর কাজ বন্ধ রাখে বনবিভাগ।

স্থানীয়রা জানায়, খবর পেয়ে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের কর্মকর্তা, বনরক্ষীসহ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আমরবুনিয়া এলাকায় পৌঁছায়। তবে সন্ধ্যা হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা ফায়ারফাইটিংয়ের মেশিন ও যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। তারা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করতে পারেনি।

স্থানীয় বেল্লাল ফকির নামের এক ব্যক্তি বলেন, লোকালয় থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে আগুন ধরেছে। পাতার মধ্য থেকে আগুন উপরে উঠছে। বড় বড় গাছ পুড়ছে।

স্থানীয় সুমন হাওলাদার জানান, বলই গাছের শুকনা ডাল ও মাটিতে পড়ে থাকা পাতা আগুনে পুড়ছে। দিনের আলোয় এটি ভালো বুঝা না গেলেও রাত গভীর হলে বিভিন্ন জায়গায় আগুন দৃশ্যমান হবে বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন মোংলার স্টেশন কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়মুজ্জামান বলেন, বন বিভাগের মাধ্যমে খবর পেয়ে মোরেলগঞ্জ ও মোংলা ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট আমরবুনিয়া এলাকায় পৌঁছেছি। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। যেখানে আগুন লেগেছে, সেখান থেকে পানির দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। যে কারণে আমরা এখন পর্যন্ত আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু করতে পারিনি। সন্ধ্যা হওয়ায় আমরা ফিরে এসেছি। রোববার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বনের মধ্যে প্রবেশ করে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করব।

আগুনের বর্তমান পরিস্থিতি কেমন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বনের ভেতর প্রচুর পরিমাণ গাছের শুকনো পাতা রয়েছে যার কারণে আগুনটা বাতাসে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকায় কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। তবে আগুন নতুন এলাকায় ছড়িয়ে যাতে না পড়ে সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে।

আগুন নেভাতে যাওয়া সিপিজি সদস্য মণিময় মণ্ডল বলেন, বনভূমির বিভিন্ন স্থানে এখনও আগুন জ্বলছে। আগুনের প্রচণ্ড তাপে ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। কাছাকাছি কয়েকটি জায়গার আগুন আমরা নেভাতে পারলেও এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন যাতে নতুন এলাকায় ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সন্ধ্যার ভিতর বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সাথে আমরা শুকনো গাছ অপসারণ করেছি। বিভিন্ন স্থানে ছোট ড্রেন কেটে রেখেছি। গহীন বনে অনেক হিংস্র প্রাণী আছে এবং একই সাথে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আগুন নেভানোর কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শোনার পর বন বিভাগ ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা সেখানে ছুটে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এখনও সেখানে আগুন জ্বলছে। কাল সকাল থেকে আবারও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু হবে।

বনের মধ্যে কিভাবে আগুন লেগেছে বা কি পরিমাণ জায়গায় আগুন লেগেছে এমন প্রশ্নে ডিএফও বলেন, আগুন লাগার কারণ এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পারিনি। কি পরিমান জায়গাজুড়ে আসলে আগুনের ব্যাপ্তি তাও জানা যায়নি। আগুনের পরিমাণ, আগুনে ক্ষয়ক্ষতি ও আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে জানতে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেবকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হবে এবং তাদের রিপোর্ট পেলে জানা যাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।

গত দুই যুগে এই নিয়ে অন্তত ২৬ বার সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবার-ই তদন্ত কমিটি গঠন হয়। আগুনের কারণ হিসেবে প্রতিবারই উঠে আসে জেলে, মৌয়ালদের বিড়ি-সিগারেট বা মৌমাছি তাড়াতে জ্বালানো মশাল থেকেই সবচেয়ে বেশি আগুনের সূত্রপাতের কথা। তবে বনজীবীদের প্রশ্ন নিজেদের জীবিকার স্থানে আগুন লাগাবেন কেন তারা? তাদের দাবি প্রভাবশালীরা মাছ ধরতে বনের একটি অংশ পুড়িয়ে দেয়। সেখানে জোয়ারে পানি জমলে সহজে জাল দিয়ে ঘিরে মাছ ধরেন তারা। কিন্তু এই দোষ চাপানো হয় বনজীবীদের উপর।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!