রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে আরও ১৯ জন মারা গেছেন। সোমবার (০৫ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার (০৬ জুলাই) সকাল ৯টার মধ্যে মারা যান তারা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১৯ জন মারা গেছেন এদের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে করোনা। এ ছাড়া ১৫ জন উপসর্গে মারা গেছেন।
এদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ এবং ছয়জন নারী। মৃত ১১ জনের বয়স ৬১ বছরের ওপরে। এ ছাড়া ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ছয়জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে একজন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন।
গত একদিনে মারা যাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১০ জনের বাড়ি বিভাগে করোনার হটস্পট রাজশাহী জেলায়। এ ছাড়া নওগাঁর দুজন, নাটোরের দুজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা এবং জয়পুরহাট জেলার একজন করে মারা গেছেন। করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন তারা।
রামেক হাসপাতাল পরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালে সর্বোচ্চ চারজন করে মারা গেছেন নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ), ২২ এবং ২৯/৩০ নম্বর ওয়ার্ডে। এ ছাড়া ১৬ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন করে এবং ৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে একজন করে মারা গেছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে একজন করে মারা গেছে রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও পাবনয়ে। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ১৫ জনের মধ্যে রাজশাহীর ৯ জন এবং নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা এবং জয়পুরহাটের একজন করে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের মরদেহ দাফনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শয্যা বাড়ল ৪৯
আরেক দফা শয্যা বেড়েছে রামেক হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে। ৪৯ শয্যার ৪ নম্বর ওয়ার্ড করোনা রোগীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সোমবার বিকেলে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সেখানে রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন।
নতুন এই ওয়ার্ড চালুর পর থেকে করোনা ইউনিটের শয্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪৫৪। এ পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৮৯ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ১৯ জন। করোনা নিয়ে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১৯৭ জন। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ২০৪ জন। করোনা ধরা পড়েনি হাসপাতালে ভর্তি ৮৮ জনের নমুনায়। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৬ জন। এই একদিনে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৭৩ জন।
এর আগে সোমবার (০৫ জুলাই) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ল্যাবে ২৮২ জনের এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ পিসিআর ল্যাবে ৪৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে রামেক হাসপাতাল ল্যাবে ৭৫ ও রামেক ল্যাবে ১২৬ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার অনুপাতে রাজশাহীর ২৯ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই ২২ জন, ২ জুলাই ১৭ জন, ৩ জুলাই ১৩, ৪ জুলাই ১২ জন এবং ৫ জুলাই ১৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন রামেক হাসপাতালে। গত ২৯ জুন করোনা ইউনিটে সর্বোচ্চ ২৫ জন মারা যান। করোনা সংক্রমণ শনাক্তের পর হাসপাতালে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড এটি।
গত বছরের এপ্রিল থেকে এই বছরের জুন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ১৬১ জন রোগী। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন ৫ হাজার ৯২৭ জন। এই ১৪ মাসে মারা গেছেন ১ হাজার ৭৮ জন। এর মধ্যে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৪৬ জনের। অন্যদের মৃত্যু হয়েছে উপসর্গ নয়তো অন্যান্য শারীরিক জটিলতায়।
খুলনা গেজেট/ টি আই