৮ শর্তে আগামী শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বিএনপিকে রাজশাহীতে বিভাগীয় গণসমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। বুধবার (৩০ নভেম্বর) রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের পক্ষে বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিএনপিকে এই অনুমতি দেওয়া হয়।
এদিকে ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে অনিদিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হচ্ছে। বুধবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে ধর্মঘটের ডাক দেয় রাজশাহী বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
অপরদিকে গণসমাবশ উপলক্ষে তিন দিন আগেই রাজশাহীতে আসতে শুরু করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তাদের দাবি- বাস বন্ধ হয়ে গেলে তারা সমাবেশে আসতে পারবেন না। তাই তারা আগেই রাজশাহীতে চলে এসেছেন। থাকছেন আত্মীয়ের বাড়িতে।
পুলিশের শর্তগুলো হচ্ছে- ১. মাদরাসা ময়দান চত্বরের মধ্যে সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। সমাবেশস্থলের আশপাশসহ রাস্তায় কোনো অবস্থাতেই সমবেত হওয়া এবং যান ও জন চলাচলে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। নিরাপত্তার জন্য সমাবেশে আগতদের চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
২. দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক-ধর্মীয় মূল্যবোধ, রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কার্যকলাপ এবং উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান ও প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
৩. সমাবেশে আসা-যাওয়ার পথে শোভাযাত্রা ও মিছিল করাসহ আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে- এরূপ কর্মকাণ্ড করা যাবে না। ব্যানার-ফেস্টুন ও পতাকায় কোনো লাঠিসোটা ও রড ব্যবহার করা যাবে না। ব্যানার-ফেসটুন ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করতে হবে।
৪. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময় মাইক/শব্দযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
৫. মঞ্চ তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত (আইডি কার্ডসহ) তারা ব্যতীত অন্য কেউ আগামী ৩ ডিসেম্বর সমাবেশের পূর্বে সমাবেশস্থলে প্রবেশ কিংবা অবস্থান করতে পারবেন না। সমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম ওইদিন দুপুর ২টা থেকে শুরু করে বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। সমাগত নেতাকর্মীরা যাতে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ বা আয়োজকদের সেই দায়িত্ব নিতে হবে।
৬. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের অভ্যন্তরে ও বাইরে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। সমাবেশস্থলের বাইরে বা সড়কের পাশে প্রজেক্টর/মাইক/সাউন্ড বক্স ব্যবহার করা যাবে না। সমাবেশস্থলে ইন্টারনেট সংযোগ, ব্রডব্যান্ড সংযোগ ও রাউটার ব্যবহার করা যাবে না।
৭. যানবাহনসমূহ শহরের ভেতরে প্রবেশ করানো যাবে না। রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশের কর্মসূচি পালন থেকে বিরত থাকতে হবে। পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থানে গাড়ি পার্কিং করতে হবে। মূল সড়কে কোনো পার্কিং করা যাবে না।
৮. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়। স্থান ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে অনুমোদন নিতে হবে। জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন।
রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশের সমম্বয়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু পুলিশের চিঠি হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় বাস মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর জানান, মহাসড়ক থেকে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধসহ সমিতির ১০ দফা দাবি ছিল। এসব দাবি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পূরণ না হওয়ায় রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনিদৃষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু হচ্ছে।
অপরদিকে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, নেতাকর্মীরা রাতে সমাবেশস্থলের আশপাশের এলাকায় থাকবেন। যদিও রাত থেকে সমাবেশস্থলে প্যান্ডেল তৈরির কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে রাজশাহী বিভাগের বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা এসেছেন। এর আগে দুপুরে বগুড়ার, শিবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও নাটোর থেকে আসা নেতাকর্মীদের রাজশাহী মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে দেখা যায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মঙ্গলবার এসেছেন। কেউ বা আজ সকালে এসেছেন।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, যেহেতু ভোর থেকে পরিবহন ধর্মঘট। সকালের আগেই রাজশাহীতে বিএনপির এক থেকে দেড় লাখ নেতাকর্মী চলে আসবেন। পর্যায়ক্রমে আরও নেতাকর্মী আসবেন। আমরা নগরবাসীকে অনুরোধ করেছি। তারা বিএনপির নেতাকর্মীদের থাকতে দেবেন। এছাড়া অনেক নেতাকর্মীর আত্মীয়ের বাড়ি রাজশাহীতে। তারা তাদের আত্মীয়ের বাড়ি থাকবেন। অনেকেই হোটেল, মেসে থাকবেন।
উল্লেখ্য, আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে (হাজী মুহম্মদ মুহসীন উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে) বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ রয়েছে। আট শর্তে তাদের সেখানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ এমএম