খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
  দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্র দেশে ব্যবসায় পরিবেশ নিশ্চিতের অন্যতম বাধা : সিপিডি
  সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন ও তার স্বামীর পাসপোর্টের আবেদন স্থগিত

রাজনৈতিক সংকটে ইমরান খান, হারাতে পারেন গদি

আন্তর্জা‌তিক ডেস্ক

সামরিক বাহিনীর সমর্থন হারানোর পর পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাবের মুখে সংকটে পড়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অনাস্থা ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে ইমরান খান ১০ লাখ সমর্থক নিয়ে ইসলামাবাদে সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেইসঙ্গে তার দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া আইনপ্রণেতাদের পার্লামেন্টের সদস্য পদ বাতিল ঘোষণা করতে সেদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ষড়যন্ত্রে’ প্রভাবিত হয়ে সমালোচকেরা তার সমালোচনা করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ক্রিকেট মাঠ থেকে রাজনীতিতে এসে প্রধানমন্ত্রী বনে যাওয়া ইমরান।

তবে তার পদত্যাগের দাবি দিনে দিনে জোরালো হচ্ছে। সমালোচক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্লামেন্টে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। সমাবেশ করে এখন আর পরিস্থিতি পাল্টে দেওয়ার সুযোগ নেই।

নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক রাজনৈতিক ঝুঁকি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভিজির কনসাল্টিংয়ের প্রেসিডেন্ট আরিফ রফিক বলেন, “তিনি (ইমরান) ঠিকই বুঝতে পারছেন যে তার সময় শেষ হয়ে আসছে। তিনি লড়াকু মানসিকতার। তবে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে না যে অনাস্থা ভোট থেকে উৎরে যাওয়ার মত যথেষ্ট সমর্থন পার্লামেন্টে তার পক্ষে আছে।”

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। পরমাণু অস্ত্রধারী দেশটি প্রতিবেশী আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে এবং প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অধীনে পাকিস্তান ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বলয় থেকে সরে চীনের আরও ঘনিষ্ট হয়ে উঠেছে, রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

তবে ইমরানের জন্য রাজনৈতিক হুমকি মূলত তার দেশের ভেতরে। মূল্যস্ফীতির হার দুই অংকের ঘরে, ফলে সর্বত্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে এবং সমালোচনা বেড়েই চলেছে। বলা হচ্ছে, ইমরান দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছেন।

বড় সমস্যা হচ্ছে, যে সামরিক বাহিনীর ছায়ায় ইমরান প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন, সেই ছায়া এখন তার ওপরে আর নেই। মূলত তার ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত সাবেক সামরিক গোয়েন্দা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফাইজ হামিদকে সামরিক বাহিনীর প্রধানের পদ দিতে গিয়ে তিনি সামরিক বাহিনীর সমর্থন হারিয়েছেন। পাকিস্তানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা ইমারানের ওই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন।

আর এর সুযোগ নিয়েছে বিরোধী দলগুলো, পার্লামেন্টে তারা অনাস্থার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এদিকে নীতির কারণে ইমরান এখন প্রায় বন্ধুশূন্য, দর কষাকষির সুযোগও নেই বললে চলে। ক্ষমতায় থাকার সময় ইমরান প্রধান বিরোধী নেতাদের বিভিন্ন সময়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন, যারা এখন জামিনে বাইরে আছেন। অবশ্য তাদের আবারও কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন তিনি।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, আগামী সপ্তাহ নাগাদ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব তোলা হতে পারে। আর সেই প্রস্তাব টিকে গেলে পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় পুরো ৫ বছরের মেয়াদ না থাকতে পারার রেকর্ডটিই দীর্ঘায়িত হবে।

এদিকে ইমরানের কঠোর হওয়ার ঘোষণা এবং ইসলামাবাদে সমাবেশের ডাক সহিংসতার আশঙ্কাও উসকে দিয়েছে। সেরকম কিছু ঘটলে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আবারও আটকে যেতে পারে।

ইমরান খানের সরকারের জোটে থাকা তিনটি বড় শরিক দল ইঙ্গিত দিয়েছে, পার্লামেন্টের অনাস্থা ভোটে তারা বিরোধী দলের পক্ষে থাকতে পারে, যা সরকারের পতন ঘটাতে যথেষ্ট।

বিরোধী নেতারা এমন দাবিও করেছেন যে, ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের ডজনখানেক সদস্যও অনাস্থার পক্ষে সমর্থন দিতে পারেন। দলটির অন্তত ডজনখানেক আইনপ্রণেতা মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে না পারার জন্য নেতার দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।

বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা মুস্তাফা নওয়াজ খন্দকার বলেন, “ক্ষমতাসীন জোট সংখ্যগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। সামরিক বাহিনীও ইমরানকে রক্ষায় খুব একটা আগ্রহী না। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার বোঝাটা আসলেই অনেক ভারী হয়ে উঠেছে তার জন্য।”

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, দেশের অর্থনীতিকে ঠিক পথে ফিরিয়ে আনা, স্বাধীন আমেরিকা-বিরোদী পররাষ্ট্র নীতি ধারণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেওয়া ও জাতীয়তাবাদের কথা বলে ২০১৮ সালে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসেন ইমরান। কিন্তু শুধু আমেরিকার বিরোধিতা করা ছাড়া বাকি প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।

মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে সঙ্কটের জেরে পাকিস্তানেও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। বিপুল বিদেশি ঋণের বোঝা আগের সরকারের কাছ থেকে ইমরানের সরকারের ঘাড়ে চেপেছে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুর্দশার এই দায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরানের ওপরই চাপছে এখন।

পাশাপাশি, তার ভ্রান্ত অর্থনৈতিক নীতি, ক্ষমতায় বসার প্রথম বছরে একাধিকবার অর্থবছরের মেয়াদ বদলানোসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে পাকিস্তানকে ভুগতে হচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

সমালোচকেরা ইমরানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা এবং ঘনিষ্টজনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও তুলে আসছেন।

অবশ্য ইমরান খান যদি লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদকে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে বসাতে পারেন, তাহলে বিরোধী দলীয় নেতাদের আরও হয়রানি ও গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হতে হবে।

বিরোধীদের অভিযোগ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ইমরানকে জেতাতে কলকাঠি নেড়েছিলেন জেনারেল হামিদ এবং তদের আশঙ্কা, সেনাপ্রধানের পদে বসলে আগামী নির্বাচনেও তিনি তেমনই করবেন।

পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে নভেম্বরে, এবং বিরোধী নেতাদের আশঙ্কা, হামিদকে ওই পদে বসাতে চেষ্টা করছেন ইমরান। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমান রাজনৈতিন সংকটের পেছনে হয়ত এ বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরান খান ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে ফাটল প্রথম প্রকাশ্যে আসে গত বছর যখন ইমরান সামরিক বাহিনীর নিয়মিত বদলি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেন এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদকে গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানের পদেই বহাল রাখার চেষ্টা করেন। ওই লড়াইয়ে হেরে যান ইমরান, এবং হামিদকে পেশোয়ারে বদলি করা হয়।

জেনারেলরা প্রধানমন্ত্রীর বিশৃঙ্খল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়েও অসন্তুষ্ট বলে সামরিক বাহিনী ঘনিষ্ট রাজনীতিকেরা জানিয়েছেন।

আমেরিকা-বিরোধী স্লোগান তুলে জনপ্রিয়তা পাওয়া ইমরান খান তার সমালোচকদের এই বলে আক্রমণ করছেন যে তারা বিদেশি শক্তির মদদপুষ্ট। গত সপ্তাহে সোয়াতে এক রাজনৈতিক সমাবেশে তিনি ‘আমেরিকার দাসদের বিরুদ্ধে’ দাঁড়াতে তাকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান।

ইমরান একাধিকরা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করলেও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তিনি একবারও কথা বলেননি, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ককে আরও শীতল করে তুলেছে।

গত জুনে ইমরান খান বলেছিলেন, আফগানিস্তানের ভেতরে ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযান চালানোর জন্য পাকিস্তান তার ভূখণ্ডে সিআইএর ঘাঁটি করার ‘একদমই সুযোগ দেবে না’।

বিরোধী দলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে, তবে বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা খুররম দস্তগির খান বলেছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিদেশি শক্তির মদদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

তিনি বলেন, “এখানে বিদেশিদের কোনো হাত নেই। একমাত্র যে হাত কাজ করছে তা হলো পাকিস্তানের জনগণের হাত, যে হাত তুলে তারা বর্তমান সরকারের কাছে প্রার্থনা করছেন প্রত্যাশা পূরণের।”

সরকার ও বিরোধী পক্ষের নেতাদের পরস্পরকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক ভাষায় কথাবার্তা রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ বাড়িয়ে তুলছে। বিরোধীরা সরকারের দলের বিরুদ্ধে সহিংস পন্থা অবলম্বনের অভিযোগ তুলেছে।

শুক্রবার ইমরান খানের এক দল সমর্থক একটি ভবনে হামলা চালায়, যেখানে তার দলছুট আইনপ্রণেতারা আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইমরানের দলের দুই আইনপ্রণেতাকে ওই হামলার ঘটনায় আটক করা হলেও দ্রুতই আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসলামাবাদে ইমরান খানের পরিকল্পিত সমাবেশের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধীরাও পাল্টা প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে, যার ফলে সম্ভাব্য সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত সপ্তাহে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সতর্ক করে বলেছে যে দুই পক্ষের নেতাদেরই উচিত তাদের সমর্থকদের শান্ত রাখা যাতে তারা কোনো ধরনের সহিংসতায় না জড়ায়।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!