জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, শেখ হাসিনা নিজেকে বাঁচানোর জন্য দেশ থেকে লেজগুটিয়ে পালিয়ে গেছেন। আত্মীয়স্বজনদের সেইফ এক্সিট দিয়েছেন। হাসিনা নিজে বাঁচার জন্য এবং পরিবারকে বাঁচানোর জন্য পালালেও তার নেতাকর্মীদের নিয়ে যাননি। নিজের দলীয় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কথা চিন্তা করেননি। তৃণমূলদের বিচারের মুখোমুখি রেখে তিনি পালিয়ে গেছেন। দেশে যেসব নেতাকর্মী রয়েছেন তাদের তিনি টিস্যুর মতো ব্যবহার করছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ মাঠপর্যায়ে যারা নেতাকর্মী রয়েছেন- এ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। তারা কার পেছনে রাজনীতি করেছেন বা করবেন। এখন নেতাকর্মীদের চেনার সুযোগ হয়েছে। শেখ হাসিনা বিদেশে এসি রুমে বসে মোদিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। দেশের বাইরে বসে নেতাকর্মীদের উসকানি দিচ্ছেন। তারা তার কথা শুনে বিপদে পড়ছেন।
রোববার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত রয়েল রিসোর্টে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সারজিস আলম এসব কথা বলেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সোনারগাঁ উপজেলা শাখার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য তুহিন মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সোনারগাঁয়ের সংগঠক শাকিল সাইফুল্লাহ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত শাকিল আহম্মেদ, শহিদ মেহেদী হাসানের পিতা সানাউল্লাহ ও শহিদ ইমরান হোসেনে মাতা কোহিনুর আক্তার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সারজিস আলম আরও বলেন, বাংলাদেশে চাঁদাবাজি ছিল, চাঁদাবাজি হচ্ছে। সিন্ডিকেট ছিল, সিন্ডিকেট আছে। সোনারগাঁয়ে শিল্প নগরীর বিভিন্ন জায়গায় দখলদারিত্ব যা ছিল, তাই আছে। বিভিন্ন স্পট থেকে শুরু করে যত টাকার ভাগবাটোয়ারা হতো এখন তার চেয়ে কম হয় না বরং আরও বেশি হয়। এগুলো বন্ধ করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মনে রাখতে হবে অভ্যুত্থানের লড়াইয়ে ৫-৬ জুনে আমরা ৫শ জনও রাজপথে ছিলাম না; কিন্তু ৫ আগস্টে ৫ কোটি মানুষ পুরো বাংলাদেশের রাজপথে নেমেছিলাম। এজন্যই সময় দিতে হবে, সাহসিকতার সঙ্গে রাজপথে থাকতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য যদি সৎ আর ন্যায় হয় তাহলে লড়াই দীর্ঘ হওয়া সত্ত্বেও জয় সুনিশ্চিত।
সারজিস আলম ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের কাছে খবর আসছে, থানা পুলিশ ও কোর্টের অনেক বিচারক টাকার বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যুক্তদের সুযোগ দিচ্ছেন। অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা ফ্যাসিবাদের দোসরদের কাছ থেকে নানা কিছুর বিনিময়ে শেল্টার দিচ্ছেন। দয়া করে এ কাজটি করবেন না। তাহলে আপনাদের পরিণতি একদিন শেখ হাসিনার মতো হবে। কারণ আমাদের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমার যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তবে আমাদের কোনো দেশি-বিদেশি শক্তির শেল্টারের প্রয়োজন হবে না। হাসিনার বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন করছিলাম তখন আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। তাই আমাদের কোনো শেল্টারের প্রয়োজন হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদের নতুন রাজনৈতিক দল এই ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই আসছে। অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক আমাদের রাজপথের সহযোদ্ধা নাহিদ ইসলাম যিনি এ অভ্যুত্থানের ঘোষক। তাকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি যেন পুরো বাংলাদেশকে আবার আমরা সামনের সারিতে রেখে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। সেজন্য আমাদের নাহিদ ইসলাম যেন ওই ক্ষমতার মন্ত্রণালয় ছেড়ে আবারও জনতার কাতারে এসে দাঁড়ান। আমরা বিশ্বাস করি যাদের কাছে ক্ষমতার চেয়ে জনতা আগে ছিল তারা জনতার ডাকে যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো ক্ষমতার পথ ছেড়ে আবার জনতার কাতারে আসতে পারেন।
তিরি আরও বলেন, আমরা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সবাইকে একসঙ্গে রেখে বাংলাদেশে আবার নতুন একটি দল করতে চাচ্ছি। আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। বিগত ১৬ বছর যে চর্চাগুলো ছিল আমরা এখন আবার সেই চর্চাগুলো নতুন করে দেখতে পারছি। স্পষ্ট কথা যারা এসব চর্চাগুলো করে এসেছে তাদের রক্তে ওই চর্চা একদম মিশে গিয়েছে। সেই চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে তাদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে।
সারজিস বলেন, বাংলাদেশে অনেকে এখন রাজনীতি করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে। বিগত ১৫-১৬ বছরে কোন নেতাকে কাছে পেয়েছেন? কোন নেতা আত্মগোপন কিংবা দেশের বাহিরে থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বহু নেতা আছে যাদের বিগত ১৬ বছর জনগণ খুঁজেও পায়নি। তারা এখন নতুন করে নতুন রূপে এ বাংলাদেশে এসেছেন। তারাই এখন আপনাদের মাথায় হাত বোলাচ্ছেন। কঠিন সময়ে যাদের পাশে পাওয়া যায়নি তাদের নেতা হিসেবে মেনে নেওয়ার দয়া দেখাবেন না।