খুলনা, বাংলাদেশ | ২১ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৬ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান গ্রেপ্তার
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২২৫
  পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে খোরশেদ আলমের নিয়োগ বা‌তিল : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
  সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীবান্ধব সুন্দর ক্যাম্পাসের প্রত্যাশা

একরামুল হোসেন লিপু

দেশের অন্যতম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র সাধারণ শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি এবং প্রত্যাশা ছিল রাজনীতিমুক্ত প্রশাসন এবং ক্যাম্পাস।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে  দেশত্যাগের পর তাদের সে দাবি এবং প্রত্যাশা দুই’ই পূরণ হয়েছে। দাবি এবং প্রত্যাশা পূরণ হওয়ায়  বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কুয়েট ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব সুন্দর একটি ক্যাম্পাসের প্রত্যাশা করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত দিনে তারা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও বৈষম্যের  শিকার হয়েছেন। তাদের বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। বিশেষ করে আবাসিক হলগুলোতে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। যে কোন বিষয় নিয়ে তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কথা বলতে সাহস পেতো না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্নমতের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কোণঠাস ছিলেন। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক শিক্ষক-কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদেরকে সব সময় চাপে রাখতেন বলে তাদের অভিযোগ ছিল। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের রাজনীতি বন্ধ হওয়ায় তারা সিন্ডিকেট সাভারে সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন।

দলীয় সরকারের নিয়োগকৃত ভিসি, প্রো-ভিসির দাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন মতের শিক্ষকরাও নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের প্রফেসর ড. রাজিয়া খাতুন বলেন, “২০০৩ সালে আমি এই কুয়েটে এসেছি। আস্তে আস্তে এই কুয়েটের পরিবেশ এত ঘোলাটে হয়ে গেছে যে, যারা গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য তারা কোন গুরুত্ব পায়নি। বর্তমান প্রশাসন বিভিন্ন তকমা দিয়ে আমাদের শিক্ষকদের ছাত্রদেরকে দিয়ে পিটিয়ে বের করে দিয়েছে”।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিমত সকল ধরনের রাজনীতি বন্ধ হওয়ায় প্রশাসন এবং ক্যাম্পাসে একটা শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসিই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ এই বিষয়টি কুয়েটের শিক্ষার্থীদের অনেক দিনের দাবি ছিল। আজ কুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিচর্চা থেকে বাইরে থেকে শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করতে পারবে।

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২২ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্র রাজনীতির কারণে  ক্যাম্পাসে অনেক রাজনৈতিক চাপ, প্রেসার অনুভব করেছি। বিশেষ করে নতুন যখন আমরা হলে উঠি। হলে উঠার সময় আমাদের উপর বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেসার আসতো। জোর করে আমাদেরকে মিছিল-মিটিংয়ে নিয়ে যেতো।প্রথম বর্ষের যারা হলে উঠতো, হলের ডাইনিংয়ে খেতে যেত তাদেরকে অনেক রকম প্রেসার সহ্য করতে হতো। তিনি বলেন, আমাদেরকে জোর করে মিছিল মিটিংয়ে ডেকে নিয়ে যাওয়া হতো। যখন তখন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে যেতে হতো। এ কারণে ফার্স্ট ইয়ারে অনেকের রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। তারা হলে ঠিকমতো পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারত না। ক্যাম্পাসে আমরা সব সময় একটা বৈষম্য লক্ষ্য করেছি। একটা বিশেষ  যারা সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছিল তারা সব সময় হল এবং ডিপার্টমেন্টের প্রোগ্রামগুলোতে লিডিং দিত। বাকি শিক্ষার্থীদের এখানে মত প্রকাশের কোন স্বাধীনতা দিত না।৷ এত বছর ধরে বৈষম্যের শিকার শুধু স্টুডেন্টরা নয়, টিচারদেরকেও তারা রাজনৈতিক প্রেসার দিয়ে রাখতো। টিচারও স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারত না। তারা সব সময় নিজেদের ভীতর গ্রুপ তৈরি করে অন্যদের উপর নিজেদের মত চাপিয়ে দিত।

ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর এখন থেকে আমরা আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা পূর্নভাবে পাব। আমাদের পড়াশোনার মান আগের থেকে অনেক বাড়বে। রাজনীতি বন্ধ হওয়ার কারণে আমরা সুন্দর একটি ক্যাম্পাস ফিরে পাব।

উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পরের দিন ৬ আগস্ট  বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিলেও একাডেমিক কার্যক্রম এবং ক্লাস রুটিন না পেয়ে শিক্ষার্থীরা বিলম্বে হলে ফিরে। হলে ফিরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে ১১ আগস্ট দুপুরের পর তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ চারদফা দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করে। শিক্ষার্থীদের এ  দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরী সিন্ডিকেট সভার আয়োজন করে। এবং সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!