দেশের রাজনীতিবিদদের অসচেনতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সময়ে মানবাধিকার লংঘন, যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া না মেনে সাধারণ মানুষকে দীর্ঘ সময় আটক রাখা এবং সমাজে ভয়ের সংস্কৃতির প্রভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। সরকার ও বেসরকারি পর্যায় থেকে মানুষের অধিকার রক্ষা, মানবাধিকার সুরক্ষা ও মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে যথেষ্ট কাজ হচ্ছে। তারপরও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিতে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এইচআরপি কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১০টায় শহরের কাটিয়াস্থ খামারবাড়ি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বক্তারা এসব কথা বলেন।
সিএসও ‘সাতক্ষীরা জেলার মানবাধিকার পরিস্থিতি-২০২২ প্রতিবেদন মূল্যায়ন’ শীর্ষক এক ওয়ার্কশপে এইচআরডি কোয়ালিয়শন, সাতক্ষীরা, ইউএনডিপি ও মানবাধিকার উন্নয়ন সংস্থা স্বদেশ’র যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সিএসও কোয়ালিশন, সাতক্ষীরার সদস্য সচিব মাধব চন্দ্র দত্তের সভাপতিতে ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি), সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোঃ জামাল উদ্দীন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আবদুল হামিদ, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম কুমার চক্রবর্তী, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি। কর্মশালায় পাওয়ার পয়েন্টে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী ফারুক রহমান।
বক্তারা আরো বলেন, অতিসম্প্রতি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল করতে যেয়ে সেখানে নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা নামের এক প্রবীণ আদিবাসীকে হত্যা এবং ওই জনপদের বেশ কয়েকজন নারীকে মারপিট করে মারাত্মক জখম করেছে এলাকার প্রভাবশালীরা। এই হত্যাকান্ডের মামলা এখন বিচারাধীন। তবে, এরই মধ্যে প্রভাবশালীদের চাপে এলাকায় তারা ভয়ে দিন কাটাচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা হত্যাকান্ডের মেডিকেল রিপোর্টে হার্ট অ্যাটার্কের কথা বলা হয়েছে। যা তাদের মনে সংশয় সৃষ্টি করেছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হঠাৎ সাধারণ মানুষকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে এসব মানুষকে তারা কয়েক দিন আটক রেখে আর্থিক সুবিধা দিতে চাপ দিচ্ছে। অর্থ দিতে না পারলে অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে আদালতে পাঠাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ও দেশিয় আইন অনুযায়ী কাউকে ২৪ ঘন্টার বেশি আটক রাখা যাবে না। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আদালতে সোপর্দ করতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই আইনের চরম লংঘনের ঘটনা ঘটছে। বক্তারা বলেন, সাতক্ষীরা জেলা উপক‚লীয় অঞ্চল হওয়ায় এখানে নিয়মিত প্রাকৃতিক দূর্যোগের সাথে মোকাবেলা করে মানুষকে টিকে থাকতে হয়। বিভিন্ন সুযোগে এ জেলার প্রভাবশালীরা উপক‚ল রক্ষা বাঁধ কেটে লোনা পানি ফসলের জমিতে ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষ করছে। এতে ধারাবাহিকভাবে মানুষের মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার, বঞ্চিত হচ্ছে দরিদ্র মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা থেকে। কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করে প্রভাবশালীরা পরিবেশ দূষণ ও মানবাধিকার লংঘন করছে।
তারা বলেন, এসব প্রতিরোধে প্রথমে রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে, তাদেরকে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা পেতে হয়রানি হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগকে যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি জমিতে কৃষকের অধিকার, জলাশয়ে মৎস্যজীবি ও জেলেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা বিষয়ক কথা বলেন নেতৃবৃন্দ। কর্মশালায় মানবাধিকার সুরক্ষায় বিচারের দীর্ঘসূতির অবসান, বিচার প্রার্থীর সহযোগিতা, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া, জলবায়ু পরিবর্তজনিত সংকট, নারীর অধিকার উন্নয়ন ও নশ্চিত করা, শিশু অধিকার, লিঙ্গ বৈষম্য দূরিকরণ, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠির অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, প্রশানিকভাবে দূর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, শিক্ষাক্ষেত্রে সকল পর্যায়ের মানুষের অভিগম্যতা নিশ্চিত, জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষের ন্যায্য দাবি আদায়, আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, যৌন সংখ্যালঘু মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুন উর রশিদ, জেলা জাসদের সভাপতি শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলু, মহিলা পরিষদের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জ্যো¯œা দত্ত, আইনজীবী নাজমুন নাহার ঝুমুর, উন্নয়নকর্মী আবু জাফর সিদ্দিক, নাজমুল আলম মুন্না, শরিফুল ইসলাম, সাংবাদিক রঘুনাথ খা, আসাদুজ্জামান সরদার, জাহিদ হোসাইন প্রমুখ।