রাজধানীর লালবাগের ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ চাকলাদার হত্যা মামলায় আজ সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) রায় ঘোষণা করেছেন ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত। রায়ে একসময়ের ত্রাস খুলনার এরশাদ শিকদারের সহযোগী আসামি জয়নালের মৃত্যুদণ্ড এবং আরেক আসামি রুস্তম আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার নয় নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান।
আজ সোমবার আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) বেলায়েত হোসেন ঢালী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সরকারি কৌঁসুলি বলেন, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
পিপি বেলায়েত হোসেন ঢালী জানান, এ মামলায় প্রধান আসামি এরশাদ শিকদারের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ার তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, মামলার দুই নম্বর আসামি লিয়াকতকে মামলা চলাকালে মারা যাওয়ায় অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মামলার আরো দুই আসামি এরশাদ শিকদারের মেয়ের জামাই ফারুক ও ইদ্রিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় আদালত তাঁদের মামলা থেকে খালাস দিয়েছেন। ২০ বছর ধরে তাঁরা কারাগারে আছেন। এ ছাড়া জয়নাল ও রুস্তম আলী পলাতক। এ মামলায় এরশাদ শিকদার আসামির তালিকায় থাকলেও অন্য একটি মামলায় তার ফাঁসির আদেশ কার্যকর হওয়ায় মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। মামলায় আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন আবদুল খালেক।
এর আগে গতকাল পিপি বেলায়েত হোসেন ঢালী বলেছিলেন, ‘গত ১৪ জানুয়ারি বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান রায়ের জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করেন। কিন্তু ১৯ ফেব্রুয়ারি রায় প্রস্তুত না হওয়ায় বিচারক ১ এপ্রিল রায়ের জন্য নতুন দিন নির্ধারণ করেন। সেদিন করোনাভাইরাসের কারণে আদালত বন্ধ থাকায় আর রায় দেয়া হয়নি।
আইনজীবী আরো বলেছিলেন, মামলার অন্যতম আসামি এরশাদ শিকদারের দেহরক্ষী নূর আলম রাজসাক্ষী হওয়ায় তাঁকে মামলায় জামিন দিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি নিজে দোষ স্বীকার করায় তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং লিয়াকত লস্কর নামের এক আসামি মামলা চলাকালীন মারা যাওয়ায় তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
যেভাবে জামিন পান নূর আলম
১২টি হত্যাকাণ্ডে এরশাদ শিকদারের সহযোগী ছিলেন তার দেহরক্ষী নূর আলম। পরে তিনি এসব হত্যা মামলার রাজসাক্ষী হন এবং আদালতে এরশাদ শিকদারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন। তাঁর সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে খুলনার জলিল টাওয়ারের মালিকের ম্যানেজার খালিদ হত্যা মামলায় এরশাদ শিকদারের ফাঁসির আদেশ হয়। ওই মামলায় ২০০৪ সালের ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। এভাবে একে একে ১১টি মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে কারাগারে থেকেই এরশাদ শিকদারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন নূর আলম। বাকি ছিল রাজধানীর লালবাগের আজিজকে অপহরণ করে হত্যার মামলা। পুরাতন মামলা হিসেবে ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট মামলাটি চার মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দেন।
এর আগে এ মামলায় এরশাদ শিকদারের দেহরক্ষী নূর আলমকে কারাগার থেকে মুক্তির আদেশ দেন বিচারক। নূর আলম চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার আজিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ১৯৯৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে কারাগারে ছিলেন।
এদিকে নূর আলম কারাগারে থাকা অবস্থায় তার ছেলে রাফী (১৮) মারা গেছে এবং স্ত্রী ছেড়ে গেছেন। বাড়ি, জমি এখন কিছুই নেই। তিনি প্রথম জীবনে জাহাজে চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে এরশাদ শিকদারের দেহরক্ষী হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন।
এরশাদ শিকদারের গ্রেপ্তার ও ফাঁসি কার্যকর
১৯৯৯ সালের নভেম্বরে গ্রেপ্তার হন এরশাদ শিকদার। তখন তার নামে ৪৩টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এর বেশিরভাগই হত্যা মামলা। নিম্ন আদালতের বিচারে সাতটি হত্যা মামলায় তার ফাঁসির আদেশ হয় এবং চারটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়। তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি তার আবেদন নাকচ করে দেন এবং ২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। পরে টুটপাড়া কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
খুলনা গেজেট/এআইএন