রাজধানীর কলাবাগান থানাধীন হাতিরপুল এলাকায় দীর্ঘ সাত বছর ধরে গৃহপরিচারিকার কাজ করে আসছিল ফারজানা (১৫)। শুরুরদিকে ভালোভাবে কাজ করলেও গত এক বছর ধরে নির্যাতন শুরু হয় তার ওপর। দিনে দিনে বাড়তে থাকে অমানবিক নির্যাতনের মাত্রা।
গত বছর করোনায় মারা যান গৃহকর্তী লাবলী ইউসুফ। এরপর ফারজানা কাজ করতেন লাবলীর মেয়ে সুমির বাসায়। আর সেখানেই ফারজানার ওপর চলতো মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন।
বর্তমানে মুমূর্ষু অবস্থায় ফারজানা রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ফারজানার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে মেয়ের জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ দেখে দিশেহারা বাবা মো. বেলাল। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাতে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে সাত বছর ধরে লাবলী ম্যাডামের বাসায় কাজ করতো। করোনায় ম্যাডামের মৃত্যুর পর তার মেয়ে সুমির কাছে থাকতো। গত এক বছর ধরে সুমি আমার মেয়েকে নির্যাতন করতো।’
কীভাবে নির্যাতন করা হতো জানতে চাইলে ভুক্তভোগী মেয়ের বাবা বলেন, ‘কোনো ভুল হলেই মারধর করতো। কয়েকদিন আগে আমার মেয়েক টয়লেটে আটকে রেখে উলঙ্গ করে নির্যাতন করে। তারপর হারপিক খাইয়ে দিয়েছিল। কিছু হলেই সুমি ও তার ভাই হিরন নির্যাতন চালাতো।
দেখা করতে দিত কি না জানতে চাইলে ফারজানার বাবা বলেন, ‘দেখা করতে দিত না। আমরা দেখা করতে আসলে ভেতরে ঢুকতে দিত না। শুধু মোবাইল ফোনে কথা বলতে দিত। আর মোবাইলে নির্যাতনের কথা না বলার জন্য ভয় দেখানো হতো। কিন্তু ম্যাডাম যখন ছিল মেয়েটাকে অনেক আদর করতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৪ জানুয়ারি ফারজানাকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে এবং পা দিয়ে পেটে পাঁচ-ছয়টি লাথি মারে। এর ফলে মেয়েটি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর জখম অবস্থায় ভর্তি করা হয়।’
দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক বেলাল জানান, রাজমিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। একটি দুর্ঘটনায় তার পা ভেঙ্গে যাওয়ায় তিনি মেয়েকে কাজে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানায়।